Homeঅন্যান্যRepublic Day: ভারতের ইতিহাসে প্রজাতন্ত্র দিবস দিনটি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

Republic Day: ভারতের ইতিহাসে প্রজাতন্ত্র দিবস দিনটি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আমাদের দেশ ভারতবর্ষে প্রত্যেক বছর ২৬ শে জানুয়ারি দিনটি প্রজাতন্ত্র দিবস (Republic Day) হিসেবে পালিত হয়। ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি প্রথম গণতন্ত্র দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে শুরু হয়, তারপর থেকে প্রত্যেক বছর এই দিনটিকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনটিতে ভারতের সকল সরকারি অফিস ছুটি থাকলেও প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই দিনটি খুব সম্মানের সাথে পালন করা হয়। তবে আপনি কি জানেন যে প্রজাতন্ত্র দিবস দিনটি এতটা গুরুত্বপূর্ণ কেন ভারতের ইতিহাসে?

আমাদের দেশ ভারতবর্ষ প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল। বহু মানুষের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফলে আমাদের দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছিল। বহু মানুষ শহীদ হয়েছিলেন, বহু মানুষ তার স্বজন প্রিয়জনদের হারিয়েছিলেন – তারপরেই এসেছে স্বাধীনতা।

১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারত ইংরেজ শাসনের অধীন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ভারত স্বাধীন হলেও সে সময় ভারতের নিজস্ব কোন স্থায়ী সংবিধান ছিল না। ১৯৩৫ সালের গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়ান অ্যাক্ট এর সংশোধিত সংস্করণ অনুযায়ী তখন শাসন কার্য চলত।

যত দিন যেতে লাগল, ততই ভারতের নিজস্ব একটি সংবিধানের প্রয়োজন দেখা দিতে শুরু করল। দেশ স্বাধীন হবার পরে সংবিধান তৈরি নিয়ে একটি সভা ঘোষণা করা হয়। ডঃ বি আর আম্বেদকর, জহরলাল নেহেরু, সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রমূখ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সংবিধান সভা বসে। ডঃ বি আর আম্বেদকর এর নেতৃত্বে 1947 সালের 19 আগস্ট ভারতের স্থায়ী সংবিধান গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে একটি খসড়া কমিটি গড়ে তোলা হয়।। ১৯৪৭ সালের ৪ নভেম্বর এই খসড়া কমিটি সংবিধান সভায় একটি খসড়া জমা দেয় ভারতীয় সংবিধান তৈরি নিয়ে।

এর পরের ২ বছর জনগণ এবং সরকারের মধ্যে বহু সরাসরি আলোচনা এবং চিন্তা ভাবনা চলে। যে সংবিধান প্রস্তাবিত হয়েছিল ,তার অনেক কিছু সংশোধন করা হয়, নতুন করে সংযোজন করা হয় এবং বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৯ সালের ২৬ শে নভেম্বর ভারতীয় সংবিধানের খসড়া গ্রহণ করা হয় সংবিধানে।

১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি সভার ৩০৮ জন সদস্য সংবিধানের দুটি কপিতে সই করেন। এই দুটি কপির মধ্যে একটি কপি ছিল ইংরেজিতে এবং অন্য একটি কপি ছিল হিন্দিতে। এই দিনের ঠিক দুদিন পর অর্থাৎ ২৬ শে জানুয়ারি সংবিধান কার্যকর হয়। সেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত র্ষ সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ হন স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি।

প্রতিটি স্বাধীন দেশের একটি নিজস্ব সংবিধান থাকে। ইংরেজ শাসনের হাত থেকে মুক্ত হলেও ভারতের কোনো সংবিধান ছিল না নিজস্ব। এই তারিখটিতে নিজস্ব সংবিধান হবার পরেই ভারতবর্ষ স্বাধীন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই কারণে এই দিনটিকে গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা দেওয়া হয়।

২৬ শে জানুয়ারি কে প্রজাতন্ত্র দিবস বা গণতন্ত্র দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পিছনে রয়েছে আরো একটি বড় কারণ। ১৯২৯ সালের ডিসেম্বরে জহরলাল নেহেরু নেতৃত্বে লাহোরে একটি কংগ্রেস অধিবেশনের ডাক দেওয়া হয়। সেইখানে একটি প্রস্তাবে বলা হয়েছিল যে ১৯৩০ সালে ২৬শে জানুয়ারির মধ্যে যদি ব্রিটিশ সরকার ভারতকে ডোমিনিয়ন মর্যাদা না দেয় ,তাহলে ভারতে পূর্ণ স্বরাজ ঘোষনা করা হবে। বলা বাহুল্য যে, সেই তারিখটির মধ্যেও ব্রিটিশ সরকার ভারতকে ডোমিনিয়ানের মর্যাদা দেয়নি। এরপর পূর্ণ স্বাধীনতা লাভের ঘোষণা করে সক্রিয় আন্দোলন শুরু করে কংগ্রেস। ১৯৩০ সালের ২৬ শে জানুয়ারির সেই গুরুত্ব বজায় রাখতেই কুড়ি বছর পর অর্থাৎ ১৯৫০ সালে এই দিনই ভারতের সংবিধান গৃহীত হয় এবং তারপর থেকে ২৬শে জানুয়ারিকেই ভারতের গণতন্ত্র দিবস ও প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে প্রতিবছর।

১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি, ভারতের সংবিধান কার্যকরী যখন হয় তখন সকাল ১০:১৮। প্রতিবছর ২৬ শে জানুয়ারি দিল্লিতে ৮ কিলোমিটার এর একটি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। রায়সিনা হিল থেকে শুরু করে রাজপথ, ইন্ডিয়া গেট হয়ে লালকেল্লায় শেষ হয় এই কুচকাওয়াজ। তবে 1950 সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ রাজপথের পরিবর্তে বর্তমান ন্যাশনাল স্টেডিয়াম এ আয়োজিত হয়েছিল। তখন ন্যাশনাল স্টেডিয়াম এর নাম ছিল ইর্ভিন স্টেডিয়াম। প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ট্যাবলো অংশগ্রহণ করে। প্যারেডে অংশগ্রহণ করেন ভারতের নৌসেনা, বায়ুসেনা এবং ভারতীয় সেনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

RELATED ARTICLES

Most Popular