অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জীবনী
নাম: | অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় |
সংক্ষিপ্ত নাম: | অভিজিৎ গাঙ্গুলী |
জন্ম: | ১৯৬২ সাল |
ধর্ম: | হিন্দু |
জাতীয়তা: | ভারতীয় |
কলেজ: | Hazra Law College |
পেশা: | আমলা, আইনজীবী (বর্তমানে) |
বৈবাহিক অবস্থান: | বিবাহিত |
পিতার নাম: | Not Mentioned |
মাতার নাম: | Not Mentioned |
ভূমিকা:
অভিজিৎ গাঙ্গুলী, বর্তমানে যিনি চাকরিপ্রার্থীদের ভগবান, যিনি কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করতে শেখেন নি; আজ সেই মহান বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলীর জীবনী সম্পর্কে জানবো আমরা। তবে তার আগে তাঁর বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
শিক্ষা জীবন:
বিচারপতি শ্রী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্কুল জীবন শেষ হয় মিত্র ইনস্টিটিউশনে। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি হাজরার ল কলেজে পড়া শুরু করেন। পড়াশোনা চলাকালীন তিনি “অমিত্র চন্দ্র” নামের একটি বাংলা রঙ্গমঞ্চের সাথে যুক্ত ছিলেন।
কর্মজীবন:
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একসময় স্কুল সার্ভিস কমিশনেরই আইনজীবী ছিলেন। যদিও তার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল একজন WBCS অফিসার হিসাবে। তবে এই চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে কলকাতা হাইকোর্টে তিনি যোগ দেন ২০১৮ সালের ২ মে। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ৩০ জুলাই হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসাবে কাজ শুরু করেন।
এর আগে তিনি দশ বছর ধরে আইনজীবী হিসাবে কাজ করেছেন। ন্যাশনাল ইন্সিওরেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলাও তাকে লড়তে দেখা গিয়েছে। অন্যদিকে ২০২১ সাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় একের পর এক নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ই এখন এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের কাছে আশা-ভরসার পীঠস্থান। নেট মাধ্যমে প্রশংসাও কুড়োচ্ছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
উল্লেখযোগ্য মামলা:
অভিজিৎ গাঙ্গুলির দেওয়া বিভিন্ন রায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, আইনের গণ্ডির মধ্যে থেকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বিচারপ্রার্থীদের সহায় হয়েছিল। কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ মামলার বিচার করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য শুক্রবার রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতার স্কুল শিক্ষকের চাকরি খোয়ানো এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ।
তবে শুধু এসএসসি-ই নয়, শিক্ষা সংক্রান্ত আরও একাধিক মামলার রায় দিয়েছেন তিনি। হাই কোর্ট পাড়ায় তাঁকে অনেক বিচারপ্রার্থীই ‘জনগণের বিচারপতি’ নামে ডেকে থাকেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মানবিক রায়’-এর অন্যতম উদাহরণ ৭৬ বছরের শ্যামলী ঘোষের মামলা। রায় বেরোনোর পর এজলাসেই কান্নায় ভেঙে পড়ে সত্তরোর্ধ্ব শ্যামলী দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেছিলেন বিচারপতিকে। ক্যান্সার আক্রান্ত অধস্তন শিক্ষিকার ১২ দিনের বেতন কেটে নেওয়ায় প্রধান শিক্ষকের পদ কেড়ে নিয়েছিল হাই কোর্ট।
বিচারপতির ফিটনেসের রহস্য:
ফিট থাকার জন্য নির্দিষ্ট একটি রুটিন মেনে চলেন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী। সকাল ৯টা নাগাদ ঘুম থেকে ওঠেন বিচারপতি মহাশয়। তার পর শুরু আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি। আলাদা করে প্রাতরাশ করেন না। আদালতে বেরোনোর আগে রুটি এবং অল্প তেলে রান্না করা বিভিন্ন মরসুমি সব্জি দিয়ে তৈরি তরকারি খেয়ে নেন। ডায়াবিটিস আছে। দু’বেলা ইনসুলিনও নিতে হয়। ফলে ভাত খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন সেই ১৯৯৫ সালে! পরিবারের এক সদস্য অবশ্য বললেন, রবিবার অল্প ভাত খান। চা খেতে অসম্ভব ভালবাসেন। সারা দিনে কম করে অন্তত ৩০ কাপ চা চা-ই তাঁর। রাতে খাওয়ার পাতে বিভিন্ন সময় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে থাকে লুচি, পরোটা বা রুটি। পারিবারিক সূত্রের দাবি, বিচারপতির প্রিয় খাবার নাকি বিরিয়ানি এবং কচুরি-আলুর দম। ‘ফিট’ থাকতে আলাদা করে কোনও শরীরচর্চা করেন না। মনে করেন, শরীর থাকলে খারাপ হবে। দায়িত্ব সামলাতে হবে বলে আলাদা করে সুস্থ থাকার কোনও প্রয়োজনীয়তা আছে, এমনটা তিনি মনে করেন না। এ সব অবশ্য তিনি ঠাট্টা করে বন্ধুমহলে বলে থাকেন। আর বন্ধুরা বলেন, তাঁর গম্ভীর মুখের আড়ালে লুকিয়ে আছেন এক আদ্যোপান্ত রসিক মানুষ।
অভিজিৎবাবুর বই ও সিনেমাপ্রেম:
বই পড়তে বেজায় ভালোবাসেন বিচারপতি মহাশয়। তবে অবশ্যই তা আইনের বই নয়! ইংরেজি এবং বাংলা সাহিত্যের রসাস্বাদন করেন। একসঙ্গে দু’তিনটে বই পড়েন। যখন যেটা ইচ্ছে হয় পড়েন। তবে পছন্দের কবি জীবনানন্দ এবং জয় গোস্বামী। সময় পেলেই ডুব দেন তাঁদের কবিতায়।
বই পড়া ছাড়াও, সিনেমা দেখতে তাঁর ভীষণই ভালো লাগে। বিচারপতির পছন্দের সিনেমার তালিকায় রয়েছে ‘কোনি’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং সদ্যপ্রয়াত তরুণ মজুমদার পরিচালিত ‘দাদার কীর্তি’। ওটিটি নয়, বড় পর্দাতে সিনেমা দেখাই বেশি পছন্দ তাঁর। কানাঘুষোয় জানা গেল, শেষ ছবি দেখেছেন ‘কাশ্মীর ফাইলস’।কয়েকদিন আগে শাহরুখ খান অভিনীত ‘পাঠান’ দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন বলে সহকর্মীর ধমক খান বলে সূত্রের খবর। তবে তা নিছকই মজার ছলেই, তা বিচারপতি নিজেই জানান।
জনগণের আস্থার নামই ‘অভিজিৎ গাঙ্গুলি’:
অস্বচ্ছতায় সচ্ছতা আনার চেষ্টায় তাঁর বিচার আজ মন ছুঁয়েছে হাজার হাজার বিচারপ্রার্থীর। প্রিয় বিচারপতি হিসেবে মামলাকারীদের আস্থা ও বিশ্বাসে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। অন্তত বিগত কিছু দিনের এজলাসের মন্তব্য গুলি জুড়লে এমনটা বলা একেবারেই ভুল হবেনা। উল্লেখ্য, হাইকোর্টে কোন বিচারপতি কোন ধরণের মামলার বিচার করবেন তা ঠিক করেন প্রধান বিচারপতি। বিচার্য বিষয় স্থির করার এক্তিয়ার তাঁরই হাতে।
উপসংহার:
সকল মানুষের আশার আলো হয়ে এসেছেন অভিজিৎ গাঙ্গুলী। বর্তমানে তাঁকে ঘিরেই মানুষের আশা ও আকাঙ্ক্ষা। ভালো থাকুন আমাদের প্রিয় বিচারপতি মহাশয়। অভিজিৎ গাঙ্গুলি, যুগ যুগ জিও!