“আজি এ প্রভাতে রবির কর,
কেমনে পশিল প্রাণের পর”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাঙালির প্রাণ, যিনি বাঙালির প্রাণে মনে বাস করেন আজ তাঁর জন্মদিন। আজ পঁচিশে বৈশাখ। বাংলার রবির জন্মদিন। আজ সেই দিন যেদিন আমরা এত বছর পরেও আমাদের ‘রবি’কে সারাদিন ধরে মনে করি। তাঁর ব্যাপারে যতই আলোচনা করা হোক, কম হবে। এতই বিশাল তাঁর জগৎ।
আজ রবিকে নিয়ে এমন কিছু তথ্য আমরা এই প্রতিবেদন মারফত আপনাদের বলতে চলেছি যা অনেকেই জানেন না। রবির জীবনের সেই অজানা কাহিনী নিয়ে হাজির হলাম আমরা আপনাদের দরবারে।
সঙ্গীতের জগতে হাতেখড়ি:
সকলেই জানেন যে রবীন্দ্রনাথ একাধারে লেখক, কবি, রচয়িতা এবং সঙ্গীতশিল্পী আর এই প্রতিভার মধ্যে সঙ্গীতের প্রতিভা তিনি পেয়েছেন তাঁর পরিবারের থেকে। পরিবারের বাকি সদস্যদের মতোই রবিরও সঙ্গীতের হাতেখড়ি হয় বিষ্ণু চক্রবর্তীর কাছে। বিষ্ণু চক্রবর্তী মহাশয়ের শেখানোর ভঙ্গি ছিল একেবারে অন্যরকম। শিক্ষার্থীদের মনে এক অন্যরকম ভালো লাগার সৃষ্টি করতে পারতেন তিনি। যদিও রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নেন নি।
গান রচনা করার জন্য পিতার কাছে পুরষ্কার পাওয়া:
পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে রবি প্রথম থেকেই সঙ্গীত শিল্পী হওয়া নিয়ে উৎসাহ পেতেন। দেবেন্দ্রনাথ বলতেন,”রবি আমাদের বুলবুলি”!
একবার মাঘোৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ গান রচনা করেছিলেন কয়েকটি এবং পিতা দেবেন্দ্রনাথ সেই খবর পেয়ে সবকটি গান শোনেন। গান শোনা শেষে রবীন্দ্রনাথ রচিত ‘রয়েছ নয়নে নয়নে’ গানটির জন্য মোট ৫০০ টাকার চেক পুরষ্কার হিসেবে দেন।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বসে গান রচনা:
সঙ্গীত রচনার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রধান উৎসাহদাতা ছিলেন তাঁর দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ নিজেও সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন এবং পিয়ানোতে সুর তুলতেন।
সেই সময় তাঁর পাশে বসে অক্ষয়কুমার ও রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন গানের সুর রচনা করেন। এভাবেই সৃষ্টি হয়েছিলো ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’, ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে’, ‘পুরানো সেই দিনের কথা’র মতো গানগুলির।
অভিনেতা রবীন্দ্রনাথ:
শুধু যে গান রচনা করেছিলেন তাই নয় বরং অভিনেতা হিসেবেও রবীন্দ্রনাথ আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের লেখা প্রহসন ‘এমন কর্ম আর করবো না’ -টিতে ‘অলীকবাবু’র ভূমিকায় মঞ্চে অভিনেতা ও গায়ক হিসেবে অবতীর্ণ হন।
তারপর ‘কালমৃগয়া’, ‘বাল্মিকী প্রতিভা’, ‘প্রায়শ্চিত্ত’, ‘নটীর পূজা’-সহ বিভিন্ন নাটকে গায়ক ও অভিনেতার ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে।
বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসেবে রবীন্দ্রনাথ:
কবিকে নিয়ে কথা বলছি আর সেখানে কবির অন্যতম সৃষ্টি বিশ্বভারতীকে নিয়ে কথা হবেনা এমন তো হতেই পারে না। ১৯৯৮ সালে বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে একটি মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো।
১৯১৯ এর জুলাইতে প্রাচ্য শিক্ষার অনুশীলনের কথা ওঠে বিশ্বভারতীতে। সর্বসাধারণের জন্য এরপর বিশ্বভারতীকে উৎসর্গ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
জীবিত অবস্থায় বিশ্বভারতীর উপাচার্যের পদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সামলেছেন। তাঁর মৃত্যুর পরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সরোজিনী নাইডুর মতো ব্যক্তিত্বরা উপাচার্যের পদ সামলেছেন।
-Written by Riya Ghosh