আজকালকার দিনে পড়াশোনা, চাকরি-বাকরি অনেক কিছুই অনলাইন হয়ে গেছে। প্রায় সবকিছুই এখন ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করেই চলছে। সবকিছুই যেহেতু অনলাইনের মাধ্যমেই হচ্ছে, তাই বাড়িতে বসে অনলাইনের মাধ্যমে ইনকাম করাটিও এখন আর অসম্ভব না।
করোনা ভাইরাস আসার সময় থেকেই “ওয়ার্ক ফ্রম হোম” (Work From Home) কথাটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত হয়ে গেছি। বড় বড় সংস্থা থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ এর সমস্ত কাজই অনলাইনে বাড়িতে বসেই করা হচ্ছিল সেই সময়। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে বাড়িতে বসে এমন অনেক কাজ করা যায় ,যেখান থেকে প্রত্যেক মাসে বেশ মোটা টাকা উপার্জন করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে ইনকাম করার সঠিক ধারণার পাশাপাশি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে।
ঘরে বসে উপার্জন(Earning Ideas) করার নানা রকম উপায় রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ধৈর্য রাখতে হবে ।সমস্ত কাজের মতো অনলাইনের কাজেও আপনাকে ধৈর্য দেখাতে হবে। কখনোই এমনটা ভাবা চলবে না যে, আপনি আজ থেকেই কাজ শুরু করবেন আর কালকেই তার পেমেন্ট পেয়ে যাবেন। আজকের এই প্রতিবেদনে অনলাইন থেকে উপার্জন করার ৯টি উপায় সম্পর্কে আপনাদের জানানো হবে। আপনারা চাইলে আপনাদের বাস্তবিক জীবনে এই উপায় গুলি ফলো করে এগিয়ে যেতে পারেন । ধৈর্য রাখতে পারলে প্রত্যেক মাসে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন আপনারা।
ঘরে বসে আয় করার উপায় (Top 10 ways to earn from home)
ব্লগিং:
বাড়ি বসে উপার্জন করার জনপ্রিয় একটি উপায় হল ব্লগিং(Blogging) । ব্লগিং শুরু করার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি ব্লগ সাইট(Blogging Websites) তৈরি করতে হবে।ব্লগ সাইট তৈরি করতে কোন টাকা পয়সা লাগে না। তবে আপনি যদি পরে এটিকে কাস্টমাইজ করতে চান, তখন টাকা দরকার হতে পারে। বিনামূল্যে ব্লগ সাইট খোলার পর আপনি ব্লগ চালু করতে পারেন। এছাড়া নিজের ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও আপনারা ব্লগ শুরু করতে পারবেন। ব্লগে মূলত বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করা হয়। যখন অনেক মানুষ আপনার লেখা পড়ার জন্য আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে ভিজিট করবে তখন আপনাকে google এডসেন্সে (Google Adsense) এপ্লাই করতে হবে। গুগল এডসেন্স আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখাবে এবং গুগল এডসেন্স থেকে আপনি অনায়াসেই অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয়:
Google এডসেন্স থেকে উপার্জন করার জন্য আপনাকে এমন একটি প্লাটফর্ম থাকতে হবে, যেখানে বহু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ভিজিট করে থাকেন। এর জন্য সবথেকে ভালো প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ব্লগ বা ওয়েবসাইট। এখানে গুগল এডসেন্স বিভিন্ন রকম বিজ্ঞাপন দেখায়। ব্যবহারকারীরা যদি সেই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে, তাহলে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে আপনি টাকা পাবেন। ভিজিট করা মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে, ততই আপনার ইনকামের(Earning) পরিমাণ বাড়তে থাকবে।
কন্টেন্ট বা আর্টিকেল লিখে আয়:
অনলাইন সেক্টর গুলিতে প্রচুর কন্টেন্ট রাইটারের(Content Writer Job) চাহিদা রয়েছে বর্তমানে। অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ,প্রোডাক্ট রিভিউ, সিনেমার রিভিউ ইত্যাদি সম্পর্কে নানা কন্টেন বানিয়ে আপনি লেখার মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন। লেখার গুণগত মান অনুযায়ী আপনি লেখার দাম বা স্যালারি ঠিক করতে পারবেন।
পাশাপাশি আপনি কোন ওয়েবসাইট থেকে উপার্জন করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে সেখানে আপনি নিজে লিখে বা লেখার জন্য কনটেন্ট রাইটার নিয়োগ করেও উপার্জন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি কনটেন্ট রাইটার হিসেবেও উপার্জন করতে পারবেন আবার গুগল এডসেন্স থেকেও উপার্জন করতে পারবেন।
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আয়:
আপনার যদি নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট থাকে, তাহলে আপনি আপনার ওয়েবসাইট থেকে উপার্জন করতে পারবেন।
Ghoori Learning এর ওয়েব ডিজাইন কোর্স(Web Designing Course) করে নিজেই আপনি একজন ওয়েব ডিজাইন এক্সপার্ট হয়ে যেতে পারবেন। এরপর ওয়েবসাইটের হোস্টিং, থিম,ডিসাইন ইত্যাদি নিজের মতো করে সাজিয়ে ওয়েবসাইটটিকে চিন্তাকর্ষক করে তুলতে পারবেন এবং সেখানে বিভিন্ন রকম কনটেন্ট পোস্ট করে আরো বেশি সংখ্যক ভিজিটরদের আকর্ষিত করে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন। তার সাথে অবশ্যই আপনাকে আপনার ওয়েবসাইটে google এডসেন্স চালু করতে হবে , যেখানে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে আপনি উপার্জন করার সুযোগ পাবেন।
এছাড়া বিভিন্ন সংস্থা বা কোম্পানির ওয়েবসাইট তৈরি করে দেবার মাধ্যমেও উপার্জন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি বাড়ি বসেই উপার্জন করতে পারবেন, বাইরে কোথাও যাওয়ার দরকার হবে না।
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট:
বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি অল্প সময়ের ভিত্তিতে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট(Virtual Assistant Job) নিয়োগ করে থাকে। আপনি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসেই যে কোন কোম্পানির ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে পারেন। এজন্য আপনাকে ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট এর কাজ সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে এবং দক্ষতা অনুযায়ী আপনার উপার্জনের মাত্রা ক্রমশ বাড়িয়ে নিতে পারবেন। এই কাজটিও আপনারা ঘরে বসে খুব স্বাচ্ছন্দ্যের সাথেই করতে পারবেন।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং:
আপনার যদি কোন সোশ্যাল মিডিয়া(Social Media) একাউন্টে অনেক ফলোয়ার থাকে, তাহলে আপনি সেই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়াম মার্কেটিং(Social Media Marketing) এর মাধ্যমে উপার্জন করতে পারবেন। মূলত বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট, পরিষেবা, পণ্যের প্রচারের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার সব থেকে সেরা প্ল্যাটফর্ম হল ফেসবুক(Facebook Social Media Marketing)। আপনি যদি ফেসবুক সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কোর্সটি সম্পূর্ন শিখে মন দিয়ে কাজ করতে পারেন ,তাহলে ফেসবুক থেকে প্রত্যেক মাসে কয়েক হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এই কাজের জন্য আপনাকে বাইরে কোথাও যেতে হবে না , বাড়িতে বসে আপনার ইচ্ছা মতো সময় ব্যয় করলেই সাফল্য পাবেন।
ইউটিউব থেকে আয়:
বর্তমান সময়ে ঘরে বসে উপার্জন করার অন্যতম একটি জনপ্রিয় উপায় হল ইউটিউব থেকে উপার্জন করা। ইউটিউবে নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপর আপনাকে ভিডিও দিতে হবে। ভিডিওতে ভিউয়ার সংখ্যা যত বাড়বে, তত আপনার উপার্জনের পরিমাণ বাড়বে। ইউটিউব চ্যানেল(YouTube Channel) থেকে উপার্জন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার(YouTube Subscribers) থাকতে হবে। ভিডিও যথেষ্ট গুণমান যুক্ত হতে হবে।
ইউটিউব ভিডিও চালানোর সময় আমরা বিভিন্ন রকম বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। এই বিজ্ঞাপনগুলি থেকেই মূলত ইউটিউব থেকে উপার্জন করা যায়। আপনার ভিডিওতেও যদি ইউটিউব কোম্পানির পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, তাহলে আপনিও ইউটিউব থেকেও উপার্জন করতে পারবেন।
বর্তমানে ভারতেই বহু ইউটিউবার রয়েছেন, যারা প্রত্যেক মাসে কয়েক হাজার টাকা থেকে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করছেন।
গ্রাফিক্স ডিজাইন:
গ্রাফিক্স ডিজাইনিং(Graphics Designing) শিখে আপনি অনলাইনের মাধ্যমে উপার্জন করতে পারবেন। বিভিন্ন রকম ডিজাইন তৈরি করে এবং সেগুলি বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে এবং বড় বড় কোম্পানিদের কাছে বিক্রি করে প্রচুর টাকা উপার্জন করতে পারবেন। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় গ্রাফিক্স ডিজাইন এর বহু চাহিদা রয়েছে, তার সাথে রয়েছে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের(Graphics Designer) চাহিদা । বিভিন্ন সংস্থাগুলি তাদের কোম্পানির লোগো বা বিভিন্ন ব্যানার তৈরি করার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনার নিয়োগ করে থাকেন। আপনি সেখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এই কাজের জন্য আপনাকে একটি ভালো কম্পিউটার থাকতে হবে এবং বাড়িতে বসেই আপনারা এই কাজটি করতে পারবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়:
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) হচ্ছে এমন একটি ব্যবসা যেখানে অন্যের কোন একটি প্রোডাক্ট আপনি প্রচারের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবেন এবং আপনার মারফত যদি কোন ব্যক্তি সেই প্রোডাক্টটি কেনে, তাহলে আপনি সেই দামের উপর একটি নির্ধারিত কমিশন পাবেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য সবথেকে শীর্ষে আছে আমাজন সংস্থা। আপনি আমাজনের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামে(Amazon Affiliate Marketing Programme) এপ্লাই করে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। এই ব্যবসাটি আপনি সম্পূর্ণ ঘরে বসেই করতে পারবেন । এমনকি আপনি যদি দু একজন কর্মচারী রাখেন , তাহলে আপনার উপার্জনের পরিমাণ কয়েক গুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর প্রচারের জন্য আপনার যদি একটি বড় টেলিগ্রাম বা ফেসবুক গ্রুপ থাকে, তাহলে খুব ভালো হয়।
