সোনার ছেলে নীরাজ চোপড়ার জীবনী
নাম: | নীরাজ চোপড়া |
জন্ম: | ২৪ শে ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সাল |
জন্মস্থান: | পানিপথ, হরিয়ানা |
পিতার নাম: | সতীশ কুমার চোপড়া |
মাতার নাম: | সরোজ দেবী |
বোনেদের নাম: | সঙ্গীতা চোপড়া, সরিতা চোপড়া |
খেলাতে ক্যাটাগরি: | ট্র্যাক এন্ড ফিল্ড |
কোচের নাম: | ইউই হান |
ভূমিকা:
মাত্র ১৮ বছর বয়সে যে ছেলেটা জ্যাভলিন অর্থাৎ বর্শা নিক্ষেপ করে ভারতের একমাত্র ট্র্যাক এন্ড ফিল্ড অ্যাথলিট হয়ে অলিম্পিকে প্রথম সোনা জিতে আনেন, সেই হলো নীরাজ চোপড়া। আজ তাঁর জীবনী সম্পর্কে আমরা আলোচনা করতে চলেছি। আমাদের ভারতের গর্ব হলেন নীরাজ চোপড়া। তাই তাঁর বিষয়ে কিছু জিনিস জেনে নেওয়া খুব দরকার।
জন্ম ও পরিচিতি:
নীরাজ চোপড়ার জন্ম বুধবার, ২৪শে ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে, হরিয়ানার পানিপথ জেলার খন্ডরা গ্রামে। তাঁর বাবা সতীশ কুমার চোপড়া একজন কৃষক হিসেবে কাজ করেন এবং তাঁর মা সরোজ দেবী হলেন একজন গৃহবধূ। তাঁর দুই ছোট বোনের নাম সঙ্গীতা ও সরিতা। নীরজ ১৭ জনেরও বেশি সদস্যের একটি যৌথ পরিবারে থাকেন। তিনি রৌঢ় মারাঠা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
ছেলেবেলা ও শিক্ষা:
তিনি চণ্ডীগড়ের ডিএভি কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন, কিন্তু পরে, তিনি কলেজ থেকে বাদ পড়েন এবং হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিঠিপত্রের মাধ্যমে স্নাতক চালিয়ে যান।
নীরাজ চোপড়ার কোনরকম ধারণা ছিল না যে তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবেন! তিনি ১৩ বছর বয়সে কিছুটা আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে এবং অতিরিক্ত ওজন হ্রাস করার জন্য খেলাধুলার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। পানিপথের শিবাজি স্টেডিয়ামে একটি ক্রীড়া অনুষ্ঠান দেখার সময় তিনি জ্যাভলিনের প্রতি মুগ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি দেখতে পান যে তিনি অপ্রশিক্ষিত থাকা সত্ত্বেও ৪০ মিটারের বেশি দূরত্বে ছুঁড়তে পারেন! সত্যিই এতে তিনি নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন! সেই সময়ে, বিশিষ্ট জ্যাভলিন নিক্ষেপকারী জয়বীর চৌধুরী তার সম্ভাবনা এবং প্রতিভা উপলব্ধি করেছিলেন এবং তাঁকে পরামর্শ দেন এটি নিয়ে এগোতে বা এগোনোর চিন্তাভাবনা করতে। নীরজ একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষার্থী হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন এবং উন্নতি লাভ করেছিলেন।
নীরাজের খেলার কর্মজীবন:
নীরাজ চোপড়া জাতীয় যুব স্তরের দৃশ্যে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন এবং এমনকি তিনি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ইভেন্ট জিতেছিলেন। তার আসল খ্যাতি আসে যখন তিনি। AAF World U20 চ্যাম্পিয়নশিপে যা ২০১৬ সালে পোল্যান্ডে হয়েছিলো তাতে রেকর্ড ৮৬.৪৮মিটারে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন, যা এখনও অনূর্ধ্ব-২০ বিভাগে শ্রেষ্ঠ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এটি তাঁকে প্রথম ভারতীয় ট্র্যাক এবং ফিল্ড অ্যাথলিটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করে এবং তাঁর নামে একটি বিশ্ব রেকর্ড রয়েছে।
রিও ২০১৬, পুরুষদের জ্যাভলিন থ্রো যোগ্যতা চিহ্ন ছিল ৮৩.০০ মিটার, এবং নীরজ তাঁর প্রথম অলিম্পিক গেমসের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারত! কিন্তু, তাঁর আঘাত তাঁকে রিও যোগ্যতা অর্জনের প্রচেষ্টার পথে বাধা দাঁড়িয়েছিল!
২০১৬ সালের স্বপ্ন পূরণ না হলেও ২০১৭ সালে, নীরাজ এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে গোল্ড কোস্টে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমস এবং একই বছরে জাকার্তায় এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছিলেন। কিন্তু সময় বেশিদিন ভালো যায়না তাঁর। একটি কনুইয়ের আঘাতের জন্য, যেটির তৎক্ষণাৎ অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল তার জন্য চোপড়াকে ২০১৯ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করতে বাধাদান করা হয় একরকম বাধ্য হয়ে এবং তিনি প্রায় ১৬ মাস প্রতিযোগিতার বাইরে ছিলেন। কিন্তু যোদ্ধা যোদ্ধাই হয়!অস্ত্রোপচারের পর ফিরে আসেন আগুনের মতো ইচ্ছেশক্তি ও প্রাণশক্তি নিয়ে। তিনি ফিরে আসার সাথে সাথেই, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে অনুষ্ঠিত সভায় টোকিও ২০২০-এর জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন!
এখানেই থেমে থাকেননি নীরাজ! ২০২২ সালে তার টোকিও ২০২০ জয়ের পর! এরপরে ওরেগন-এ অনুষ্ঠিত বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্য পদক জেতার দলে তিনি প্রথম ভারতীয় ছিলেন। গ্রেনাডার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন এবং স্বর্ণজয়ী অ্যান্ডারসন পিটার্স ৯০.৫৪ মিটার দূরত্ব ছুড়েছেন, নীরজ ৮৮.৩১ মি. এই রৌপ্য পদকটি বিশ্ব স্তরে ভারতের দ্বিতীয়, এবং ২০০৩ সালে প্যারিস বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অঞ্জু ববি জর্জ (লং জাম্প) দ্বারা প্রথম ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন।
নীরাজ চোপড়া! নামটাই এমন ঝড় যে সেই ঝড়ের কোনো সীমারেখা থাকে না। চোপড়া ২০১৬ থেকে আজ অবধি পুরুষদের জ্যাভলিন জাতীয় রেকর্ড ধরে রেখেছেন। তাঁর বর্তমানে জাতীয় রেকর্ড হল ৮৯.৯৪মিটার।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্তি:
নীরাজ অসংখ্য জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- i) অর্জুন পুরস্কার – ২০১৮
- ii) মেজর ধ্যানচাঁদ খেল রত্ন পুরস্কার – ২০২১
- iii) পদ্মশ্রী – প্রজাতন্ত্র দিবস সম্মান – ২০২২
- iv) পরম বিশেষ সেবা পদক – প্রজাতন্ত্র দিবস সম্মান – ২০২২
- v) বিশেষ সেবা পদক – প্রজাতন্ত্র দিবস সম্মান – ২০২০
- vi) ২৭শে আগস্ট ২০২১-এ, পুনে সেনানিবাসের আর্মি স্পোর্টস ইনস্টিটিউট স্টেডিয়ামকে রাজনাথ সিং (প্রতিরক্ষা মন্ত্রী) দ্বারা ‘নীরাজ চোপড়া স্টেডিয়াম’ নামকরণ করা হয়েছিল।
নীরাজের রেকর্ডসমূহ:
- i) ২০১৮: এশিয়ান গেমসে ৪৪.০৬ মিটার মার্কের জাতীয় রেকর্ড
- ii) ২০২১: তিনি ইন্ডিয়ান গ্র্যান্ড প্রিক্সে ৮৮.০৭ মিটার জ্যাভলিন থ্রো দিয়ে তার নিজের জাতীয় রেকর্ড ভেঙেছেন।
- iii) 2021: টোকিও অলিম্পিক- এ জয়লাভ করেন।
- iv) ২০২২: ফিনল্যান্ডে Paavo Nurmi গেমসে ৪৯.৩০ মিটার থ্রো করে তিনি একটি নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েন।
- v) ২৩ জুলাই ২০২২-এ, অঞ্জু ববি জর্জের পর, তিনি দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে পদক জিতেছিলেন।
- vi) ২০২২: ৮ই সেপ্টেম্বর, তিনি জুরিখের লেটজিগ্রান্ড স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ডায়মন্ড লিগ ট্রফি জিতে প্রথম ভারতীয় হয়ে ওঠেন; তিনি ৮৮.৪৪ মিটার চক্করযুক্ত উচ্চতায় তার বর্শা নিক্ষেপ করেছিলেন।
সোনা ছাড়া তাঁর অর্জিত বাকি সব পদক:
i) রুপোর পদকসমূহ:
- ২০১৬: ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটিতে এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ
- ২০১৭: চীনের জিনহুয়াতে এশিয়ান গ্র্যান্ড প্রিক্স সিরিজ
- ২০১৭: চীনের জিয়াক্সিং-এ এশিয়ান গ্র্যান্ড প্রিক্স সিরিজ
- ২০১৮: Offenburg Speerwurf মিটিং অফেনবার্গ, জার্মানিতে
- ২০২২: ফিনল্যান্ডে পাভো নুরমি গেমস এবং বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ
ii) ব্রোঞ্জ পদক:
- ২০১৭: তাইপেই, তাইওয়ানে এশিয়ান গ্র্যান্ড প্রিক্স সিরিজ
উপসংহার:
ভারতের সোনার ছেলে নীরাজ আরো অনেক সোনা নিয়ে আসুক দেশে। নিজের লক্ষ্যে ও চলার পথে আরো উন্নত করুক নীরাজ। ‘নীরাজ’ যেনো থামতে সত্যিই ‘নারাজ’! আগামী দিনের অনেক শুভেচ্ছা জানাই।