ভগিনী নিবেদিতার জীবনী
Bhagini Nivedita Biography in Bengali
নাম: | ভগিনী নিবেদিতা |
প্রকৃত নাম: | মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল |
জন্ম: | ২৮ শে অক্টোবর, ১৮৬৭ সাল |
জন্মস্থান: | দুঙ্গানন, আয়ারল্যান্ড |
পিতার নাম: | স্যামুয়েল রিচার্ড নোবেল |
মাতার নাম: | ম্যারি ইসাবেল হ্যামিল্টন |
পেশা: | লেখিকা, শিক্ষিকা ও সমাজসেবিকা |
গুরুর নাম: | স্বামী বিবেকানন্দ |
মৃত্যু: | ১৩ই অক্টোবর, ১৯১১ সাল |
ভূমিকা:
ভগিনী নিবেদিতা ছিলেন একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ-আইরিশ সমাজকর্মী, শিক্ষক, লেখকের পাশাপাশি স্বামী বিবেকানন্দের একজন কট্টর অনুসারী। ভগিনী নিবেদিতা জি তার সমগ্র জীবন মানব সেবায় উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন না, তবুও ভারতের জনগণের প্রতি তার অগাধ স্নেহ ও ভালোবাসা ছিল। তিনি দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে আদর্শিক সমর্থন দিয়েছিলেন অর্থাৎ পরোক্ষভাবে তার ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি স্বামীজি বিবেকানন্দের শিষ্যা হিসেবেই প্রকৃতঅর্থে পরিচিত ছিলেন। আজ এই দয়ালু মহীয়সী নারীর জীবনী সম্পর্কে আমরা জানবো। তার আগে তাঁর ব্যাপারে কিছু জরুরি তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
জন্ম ও পরিচিতি:
ভগিনী নিবেদিতা স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্য হিসেবে ভারতজুড়ে সুপরিচিত। তিনি ২৮শে অক্টোবর ১৮৬৭ সালে আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন; তাঁর পিতার নাম ছিল স্যামুয়েল নোবেল, যিনি ছিলেন একজন ইংরেজ খোদাইকারী এবং নিউ চার্চের মন্ত্রী এবং তাঁর মা ছিলেন মেরি ইসাবেল নোবেল। তাঁর বাবা তাঁকে সব সময় শিখিয়েছেন যে, মানুষের সেবাই হচ্ছে ঈশ্বরের প্রকৃত সেবা। তাঁর কথা নিবেদিতার মনে রেখাপাত করে!
শিক্ষাজীবন:
ভগিনী নিবেদিতা হ্যালিফ্যাক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং শৈশব থেকেই দার্শনিক চিন্তাভাবনা করেছিলেন। মানবতা ও দরিদ্র রোগীদের সেবায় তাঁর বাবা তাকে প্রভাবিত করেছিলেন। ওয়েলশ যুবকের সাথে তার বাগদান ছিল। তবে দেখাশোনার পরপরই তিনি মারা যান। ঘটনাটি তাঁকে গভীরভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছিলো যে কারণে তিনি মানবজাতির সেবা করার জন্য তাঁর জীবন বহন করতে চেয়েছিলেন।
কর্মজীবন:
তিনি সঙ্গীত এবং শিল্পকলার খুব অনুরাগী ছিলেন। শিক্ষা সমাপ্ত করার পর, তিনি একজন শিক্ষকের চাকরি গ্রহণ করেন এবং ১৮৮৪ থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত টানা দশ বছর ধরে সেখানে কাজ করেন। তিনি শিক্ষা প্রদান এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা ছিলেন। প্রথম থেকেই, তিনি একটি খুব উদ্যোগী শিশু ছিলেন, যিনি সর্বদা শক্তি এবং উৎসাহে পূর্ণ ছিলেন। আট বছর বয়সে, তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, ধর্ম মতবাদে বিশ্বাস করার জন্য নয়, বরং এটি ঐশ্বরিক আলোর সন্ধানের বিষয়ে যা আলোকিত করবে।
স্বামী বিবেকানন্দের সাথে সাক্ষাৎ:
ভগিনী নিবেদিতা ধীরে ধীরে বৌদ্ধ ধর্মের নীতিতে আগ্রহী হতে শুরু করেন। এই সময়েই তিনি একজন মহান হিন্দু সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের সাথে দেখা করেন। স্বামী বিবেকানন্দ এই সত্যের উপর জোর দিয়েছিলেন যে, এটি অজ্ঞতা, স্বার্থপরতা এবং লোভ যা আমাদের কষ্টের পথ প্রশস্ত করে। তাঁর নীতি ও শিক্ষাগুলি তার মনে এবং হৃদয়ে একটি ছাপ ফেলেছিল এবং এটি তাঁর জীবনযাপনের পদ্ধতিতে একটি বড় পরিবর্তন এনেছিল। তিনিই তাকে ভারতের নারীদের কল্যাণে কিছু করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
সমাজ পরিবর্তন করার জন্য তাঁর মধ্যে আগুন এবং আবেগ দেখে, স্বামী ভারত মাতার ভূমিকায় তাঁর ভবিষ্যৎ ভূমিকার পূর্বাভাস দিতে পারতেন। নিবেদিতা ধ্যান অনুশীলন শুরু করেন। তাঁর মনে মূলত দুটি জিনিস ছিল যা সে আন্তরিকভাবে অনুসরণ করেছিল; একটি চিরন্তন সত্য উপলব্ধি করে জ্ঞানের সন্ধান এবং অন্যটি ছিল জগতের কল্যাণ। তিনি গর্ব করতে পারে এমন সমস্ত জিনিস ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং একটি খুব সরল জীবনযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
স্বামীজির শিষ্যত্ব গ্রহণ ও ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা:
স্বামীজির আদর্শে মুগ্ধ হয়ে মুগ্ধ ভগিনী নিবেদিতা স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এখন পর্যন্ত, তিনি গরিবদের সেবা করার জন্য ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং বস্তি এলাকার শিশুদের শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। ১৮৯৮ সালে তিনি কলকাতা, এখন কলকাতায় যান এবং তার নাম পরিবর্তন করে নিবেদিতা রাখেন, যার অর্থ ‘ভগবানকে উৎসর্গিত’! কলকাতা শহরের বেশিরভাগ বস্তি এলাকায় আসার সাথে সাথে তিনি দরিদ্র মেয়েদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তাই, তিনি শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য অন্যান্য শিক্ষক নিয়োগ করেছিলেন।
ভারতে ভগিনী নিবেদিতার কার্য:
১৮৯৯ সালে তিনি দরিদ্র রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য একটি নার্স সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সক্রিয়ভাবে ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে সমর্থন করেছিলেন এবং প্রার্থনার গান হিসেবে ‘বন্দেমাতরম’ প্রবর্তন করেছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্য হিসেবে, রামকৃষ্ণ মিশনের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এমনকি তিনি স্বামী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান নীতিগুলি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি স্বামী ব্রহ্মানন্দের সাথে রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। রামকৃষ্ণ মিশনে তার অংশগ্রহণের সময়, তিনি ১৭ই মার্চ ১৮৯৮ সালে রামকৃষ্ণের আধ্যাত্মিক সহধর্মিণী সারদা দেবীর সাথে সাক্ষাত করেন। একটি সরল জীবনযাপন এবং দরিদ্রদের সেবা করার জন্য সারদা দেবীর কঠোর জীবন ভগিনী নিবেদিতার উপর অনেক প্রভাব ফেলেছিল।
সিস্টার নিবেদিতার মৃত্যু:
তাঁর প্রচেষ্টা তাকে ভারতীয় জনগণের হৃদয়ে একজন মহান আধ্যাত্মিক নেতা করে তুলেছিল। তবে ভারতীয় সমাজ তাকে বোন হিসেবে গ্রহণ করে। দরিদ্রদের প্রতি তার সেবা এবং দরিদ্র মেয়েদের শিক্ষিত করার আগ্রহ একটি উন্নত ভারতীয় সংস্কৃতির জন্য তার তীব্রতার প্রতীক। এমন একজন মহান দার্শনিক, লেখক এবং সমাজ সংস্কারক ১৩ই অক্টোবর ১৯১১ সালে ৪৩ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে যান।
উপসংহার:
ভগিনী নিবেদিতা নিজে এই দেশীয় মানুষ না হয়েও এই দেশের নিবেদিত প্রাণ হয়ে যা যা করেছেন তা সবার মনে থাকার মতো। ভীষণই দয়ালু মহীয়সী নারী ছিলেন তিনি। তাঁর প্রতি রইলো আমাদের আপমর শ্রদ্ধা।