সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী
(Bibhutibhushan Bandopadhyay Biography in Bengali)
জন্ম: | ১২ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ সাল |
জন্মস্থান: | ঘোষপাড়া, মুরাতিপুর অধুনা, বাংলা |
পিতার নাম: | মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় |
মাতার নাম: | মৃণালিনী দেবী |
পত্নীদের নাম: | i) গৌরী দেবী ii) রমা চট্টোপাধ্যায় |
সন্তানের নাম: | তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় |
পেশা: | লেখক, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক |
মৃত্যু: | ১লা নভেম্বর, ১৯৫০ সাল |
ভূমিকা:
বিখ্যাত ‘পথের পাঁচালি’ রচনা করে যিনি ইতিহাস রচনা করেছেন, যাঁর কর্মের দ্বারা চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন; সেই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি আজ। আজ আমরা এই প্রতিবেদনে তাঁর সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতে চেষ্টা করবো।
জন্ম ও পরিচিতি:
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বাংলার নদীয়ার মুরাতিপুর গ্রামে কল্যাণীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মহানন্দ বন্দোপাধ্যায় ছিলেন একজন ‘কথক’ – একজন ব্যক্তি যিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য গল্প আবৃত্তি করেন – এবং একজন সংস্কৃত পণ্ডিতও ছিলেন। মাতা মৃণালিনী দেবী ছিলেন একজন গৃহবধূ।
ছাত্র জীবন:
বিভূতিভূষণ বনগাঁ হাই স্কুলে তার স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন, যেটি ব্রিটিশ ভারতের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি। কর্মজীবনের শুরুতে একই স্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন। বিভূতিভূষণের শৈশব এবং প্রাথমিক জীবন দারিদ্র্যের মেঘে ছায়া পড়েছিল, কিন্তু তবুও তিনি কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করার জন্য লড়াই করেছিলেন। যাইহোক, যেহেতু তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তির জন্য আর্থিকভাবে শক্তিশালী ছিলেন না, তাই তাঁকে তার পড়াশোনা বন্ধ করতে হয়েছিল। এর পরে, তাঁর পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্ত ভার এসে পড়ে তাঁর কাঁধে।
প্রাথমিক জীবন:
একজন লেখকের জীবন বন্দোপাধ্যায়ের কাছে সহজে আসেনি। তাঁর পরিবারের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে, গুরুত্ব সহকারে লেখালেখি করার আগে তাকে শেষ মেটানোর জন্য বিভিন্ন অদ্ভুত চাকরি নিতে হয়েছিল। তিনি যে স্কুলে পড়াশুনা করেন সেখান থেকে তিনি শিক্ষকতা করেন, তিনি একজন সচিবের চাকরিও নেন এবং এমনকি একটি এস্টেট পরিচালনা করেন শেষ পর্যন্ত, ১৯২১ সালে তিনি একটি শীর্ষস্থানীয় সাহিত্য পত্রিকায় তার প্রথম ছোটগল্প “উপেক্ষিতা” প্রকাশ করার সুযোগ পান। বাংলার নাম ‘প্রবাসী’। কিন্তু, ১৯২৮ সাল পর্যন্ত বন্দোপাধ্যায় তার প্রথম উপন্যাস “পথের পাঁচালী” প্রকাশ করেন, যার জন্য তিনি সমালোচকদের মনোযোগ ও প্রশংসা পেয়েছিলেন। এই উপন্যাসের মাধ্যমেই তিনি বাংলা সাহিত্যে এক বিশিষ্ট নাম হয়ে উঠেছিলেন।
কর্মজীবন:
বিভূতিভূষণ যে সময়ে উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখা শুরু করেন যখন সামাজিক অবক্ষয় এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা নিয়ে প্রচুর গবেষণা চলছিল। যাইহোক, তাঁর লেখা গবেষণার এই দিকগুলির উপর জোর দেয়নি, বরং সেগুলি সরল জীবন, মানব চিত্র এবং গ্রাম বাংলার পরিবেশগত আনন্দ এবং বাংলার মানুষের উপর আলোকপাত করেছে। তিনি সহজ ভাষায় এবং এমনভাবে লিখেছেন যাতে তার ধারণা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। বাস্তবতা আরেকটি প্রধান দিক যা তার লেখায় চিত্রিত হয়েছে। তাঁর লেখায় মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে ভাগ করা সূক্ষ্ম সম্পর্ককে চিত্রিত করা হয়েছে এবং মানুষ, প্রাণী, পাখি, নদী এবং প্রকৃতির অন্যান্য দিকগুলির একটি শান্তিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
সৃষ্টিসমূহ:
বন্দোপাধ্যায় প্রতিদিন মাইলের পর মাইল হেঁটে জঙ্গলে যেতেন এবং সাধারণত বই নিয়ে যেতেন। তিনি মরুভূমির শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে নিজের চিন্তাভাবনা লিখতে পছন্দ করতেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস “পথের পাঁচালী” চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় তুলে ধরেন এবং স্মরণীয় ‘অপু ট্রিলজি’-এর অংশ হিসেবে একই নামের একটি চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত করেন। ‘পথের পাঁচালী’ ছাড়াও বন্দোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কিছু কাজ হল ‘অপরাজিতা’, ‘আরণ্যক’, ‘চান্দের পাহাড়’, ‘হীরা মানিক জ্বালা’, ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’, ‘ইছামতি’, ‘বিপিনের সংসার’, ‘অনুবর্তন’। ‘, ‘কোসি প্রাঙ্গনের চিঠি’, ‘দৃষ্টি প্রদীপ’, ‘দেবজান’, ‘আশানি সংকেত’, ‘কেদার রাজা’, ‘দামপতি’, ‘সুন্দরবনে সাত বাতসার’ (যা তিনি সম্পূর্ণ করতে পারেননি), ‘দুই বাড়ি’, ‘কাজল’ (অপরাজিতোর সিক্যুয়েল, তার ছেলে তারাদাস দ্বারা সম্পন্ন করা হয়েছে), ‘মিসমিদার কাবাচ’, ‘যাত্রাবদল’, ‘মেঘমল্লার’, ‘মৌরিফুল’ এবং ‘তাল নবমী’ ইত্যাদি।
বৈবাহিক জীবন ও সন্তান:
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের প্রথম স্ত্রী গৌরী দেবী তাঁদের বিয়ের এক বছর পর প্রসবের সময় মারা যান। এই মর্মান্তিক ঘটনা এবং একাকীত্ব যা তার জীবন নিয়ে আসে এবং ছায়া ফেলে তার প্রথম দিকের লেখায় একটি বিশিষ্ট বিষয় হয়ে ওঠে। তিনি ৪৬ বছর বয়সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী রমা চট্টোপাধ্যায়ের সাথে পুনরায় বিয়ে করেন, তাঁদের ১৯৪৭ সালে একমাত্র পুত্র তারাদাসের জন্ম হয়।
পুরস্কার প্রাপ্তি:
বিভূতিভূষণের লেখায় শুধু গ্রামবাংলার দুঃখ-কষ্ট, দারিদ্র্য, আশা-আকাঙ্খাই ফুটে ওঠে না, তিনি প্রান্তরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতিও আকৃষ্ট হন! এটি তার আরণ্যক (আরণ্যক) উপন্যাসে সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। ইছামতী (ইছামতী) উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৫১ সালে মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন।
মৃত্যু:
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় ১৯৫০ সালের ১লা নভেম্বর হৃদরোগের আক্রমণে আক্রান্ত হয়ে পরলোকে চলে যান। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৫৬ বছর এবং তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ হয় ঘাটশিলায়।
বিভূতিভূষণের জীবনে ঘটে যাওয়া সমস্ত তথ্য একনজরে:
১৮৯৪: বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় ১২ই সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
১৯২১: তিনি একটি শীর্ষস্থানীয় বাংলা সাহিত্য পত্রিকায় তার প্রথম ছোটগল্প “উপেক্ষিতা” প্রকাশ করেন।
১৯২০ এর দশকের গোড়ার দিকে: বিবাহিত গৌরী দেবী যিনি বিয়ের এক বছর পর সন্তান প্রসবের সময় মারা যান।
১৯২৮: বন্দোপাধ্যায় তার প্রথম উপন্যাস “পথের পাঁচালী” প্রকাশ করেন।
১৯৪০: রমা চট্টোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন।
১৯৪৭: তার একমাত্র পুত্র তারাদাস জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৫০: বন্দোপাধ্যায় মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং ১লা নভেম্বর ঘাটশিলায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
উপসংহার:
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের সৃষ্টির গুনে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন আজীবন। এখনো “পথের পাঁচালী” গল্প পড়ার সময় বা সিনেমাটি দেখার সময় সবার ওঁনার কথাই মনে পরে।
Written by Riya Ghosh