উচ্চমাধ্যমিক শেষ হওয়ার পর একটা বড় প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে – এবার কী পড়া উচিত? অনেকেই না ভেবেচিন্তে চলে যান ইঞ্জিনিয়ারিং (Engineering) বা মেডিক্যালে (Medical)। কারণ সমাজে এই দুইটাই যেন সফল হওয়ার তকমা পেয়ে বসে আছে। কিন্তু, সময় অনেক বদলে গেছে। আজকের দিনে এমন অনেক কোর্স আছে, যেগুলোর চাহিদা প্রচুর, আর ভবিষ্যতেও সেই চাহিদা কমবে না, বরং বাড়বে।
নিচে আলোচনা করা হলো এমন কিছু কোর্সের বিষয়ে যেগুলি থেকে পরবর্তীতে লাখ লাখ টাকা প্যাকেজের চাকরি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে
১. Data Science
আজকের দুনিয়াটা “ডেটা”-কে ঘিরেই ঘোরে। কে কী দেখে, কী ভাবে, কোথায় বেশি সময় কাটায় – সবকিছুর হিসেব রাখা হয়। আর এই হিসেব রাখার পেছনে যারা কাজ করেন, তারা হলেন ডেটা সায়েন্টিস্ট (Data Scientist)। যদি অঙ্ক, লজিক আর কম্পিউটারে আগ্রহ থাকে, তাহলে ডেটা সায়েন্স তোমার জন্য একেবারে পারফেক্ট। এখানে শেখানো হয় কীভাবে ডেটা বিশ্লেষণ (Data Analysis), প্রোগ্রামিং (Programming), আর মেশিন লার্নিং (Machine Learning) দিয়ে বড় বড় সমস্যার সমাধান করতে হয়।
২. আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স – AI
কখনও ভেবেছো তোমার ফোন কিভাবে বুঝে ফেলে তুমি কী খুঁজছো? সেটাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence)। এই কোর্সে শেখানো হয় কীভাবে মেশিনকে মানুষের মতো ‘ভাবতে’ শেখানো যায়। রোবোটিক্স (Robotics), অটোমেশন (Automation), স্মার্ট অ্যাপস – সবকিছুর পেছনেই আছে এই প্রযুক্তি। ভবিষ্যতে এর চাহিদা কখনই কমবে না।
৩. Animation Design
যদি ছবি আঁকা, ডিজিটাল আর্ট, আর গল্প বলার প্রতি আগ্রহ থাকে – তাহলে অ্যানিমেশন তোমার জন্য সেরা সুযোগ। আজকের দিনে সিনেমা, ভিডিও গেমস (Video Games), ইউটিউব কন্টেন্ট বা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম – সব জায়গাতেই অ্যানিমেশনের বিশাল চাহিদা। এই কোর্সে শেখানো হয় 2D/3D অ্যানিমেশন, গ্রাফিক্স (Graphics), মোশন ডিজাইন (Motion Design) ইত্যাদি। শুধু সৃজনশীলতা থাকলে তুমি গ্লোবাল প্রজেক্টেও কাজ পেতে পারো।
৪. Biotechnology
যদি জীববিজ্ঞান ভালো লাগে আর নতুন কিছু আবিষ্কার করার ইচ্ছে থাকে, তাহলে বায়োটেকনোলজি নিঃসন্দেহে তোমার জন্য সেরা একটি কোর্স। এটা এমন একটা বিষয় যেখানে বিজ্ঞান শুধু বইয়ের মধ্যে আটকে থাকে না, বাস্তব জীবনে বদল আনে। কৃষি, চিকিৎসা, ফার্মাসিউটিক্যাল (Pharmaceutical) কোম্পানি সবার দরকার Biotechnology বিষয়ে দক্ষ মানুষ।
৫. Ethical Hacking
ইন্টারনেট এখন জীবনের অঙ্গ। কিন্তু সেই ইন্টারনেটই বিপদ ডেকে আনতে পারে যদি সুরক্ষা না থাকে। তাই আজকের দিনে ইথিক্যাল হ্যাকারের (Ethical Hacker) চাহিদা আকাশছোঁয়া। যারা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, কোডিং, আর সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বের করে, তারাই সাইবার জগতের সাদা রঙের রক্ষাকর্তা। এই কোর্সে শেখানো হয় সাইবার সিকিউরিটি (Cyber Security), পেনিট্রেশন টেস্টিং (Penetration Testing), আর ডিজিটাল ফরেনসিকস (Digital Forensics)।
৬. Architecture
যারা ছবি আঁকতে ভালোবাসে, ডিজাইন করতে ভালোবাসে, আর ভবিষ্যতে নিজে কিছু গড়ে তুলতে চায় – তাদের জন্য আর্কিটেকচার একেবারে ঠিক সঠিক পছন্দ। এখন তো স্মার্ট সিটির (Smart City) যুগ, সবকিছুই হতে হবে সৃজনশীল আর টেকসই (Sustainable)। তাই এই কোর্স করলে ভবিষ্যতে নিজেকে অন্যরকমভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারো।
৭. Environmental Science
প্রকৃতি তো আমাদের প্রাণ, তাই না? কিন্তু এখন সেটা ক্রমশ বিপন্ন হচ্ছে। কেউ তো রক্ষা করবে! যদি পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে চাও, এই কোর্সে পড়লে তুমি হতে পারো পরিবেশ উপদেষ্টা (Environmental Consultant), গবেষক (Researcher), বা এমন কোনও সংস্থার অংশ যারা পৃথিবীটাকে একটু ভালো রাখতে চায়।
৮.Nautical Science
যারা ছোটবেলা থেকেই জাহাজ, সমুদ্র আর নেভি দেখে মুগ্ধ – তাদের জন্য এই কোর্স এক স্বপ্নপূরণের পথ। এখানে শেখানো হয় কীভাবে সমুদ্রে নেভিগেশন (Navigation) করতে হয়, কীভাবে মেরিন অপারেশন (Marine Operation) চলে। ভবিষ্যতে মেরিন অফিসার (Marine Officer) হওয়ার পথও খুলে যায়।
একটাই কথা মনে রেখো। সবাইকে একটাই ছাঁচে ফেলা যায় না। কারও মাথা ভালো অঙ্কে, কেউ ভালো লেখে, কেউ আবার নতুন কিছু ভাবতে ভালোবাসে। তাই উচ্চমাধ্যমিকের পর নিজের আগ্রহটা আগে বোঝো। তারপর পছন্দমতো কোর্স বেছে নাও। জীবনে সফল হওয়ার রাস্তা শুধু ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়াতেই আটকে নেই – আরও হাজারটা দারুণ রাস্তা খোলা আছে, শুধু একটু খুঁজে নিতে হবে।