একশ্রেণীর মানুষের ধারণা, গ্রামে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। ব্যবসার উপযোগী পরিবেশ আছে একমাত্র শহরেই। তবে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল, কারণ বর্তমানে বহু মানুষ গ্রামে বাস করেন এবং তারা গ্রামেই জীবিকা অর্জন করেন। গ্রামের পরিবেশ এবং গ্রামের অর্থনীতিকে কাজে লাগিয়ে অনেক ধরনের ব্যবসা করা যায় যেগুলি থেকে প্রতি মাসে প্রচুর টাকা উপার্জন করা সম্ভব।
আজকের এই প্রতিবেদনে গ্রামের ব্যবসা সম্পর্কে জানানো হবে। দশটি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানানো হবে, যেগুলি গ্রামের জন্য সবথেকে সেরা হতে পারে। এই ব্যবসা গুলি থেকে প্রত্যেক মাসে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন সম্ভব এবং বর্তমানে বহু মানুষ এই ব্যবসা গুলি করছেন।
চায়ের দোকান:
চা হলো অন্যতম একটি সেরা এনার্জি ড্রিংক। শহরাঞ্চল থেকে গ্রামাঞ্চল সমস্ত জায়গার মানুষেরই প্রিয় পানীয় হল চা। গ্রামাঞ্চলে একেকটি চায়ের দোকান থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন হয়। মূলত যেখানে বাজার বসে বা ভিড় এলাকা, সেখানে চায়ের দোকান সবথেকে ভালো চলে। চায়ের দোকান করতে সেরকম বেশি পুঁজির প্রয়োজন নেই। তাই আপনারা অল্প পুঁজি দিয়ে যদি চায়ের দোকান তৈরি করতে পারেন, সেখান থেকে প্রত্যেক মাসে অনেক টাকা উপার্জন করে ফেলতে পারবেন।
আটা ময়দার মিল:
গ্রামের দিকে আটা ময়দার ব্যবহার শহরের তুলনায় আরো বেশি। প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু পুজি দিয়ে আপনি যদি একটি আটা ময়দার মিল তৈরি করতে পারেন তাহলে প্রতিদিন কয়েকশো টাকার উপার্জন করে ফেলতে পারবেন। এর জন্য আপনার একটি নিজস্ব দোকান বা ভাড়া দোকান লাগবে এবং ইলেকট্রিসিটি কানেকশন প্রয়োজন অবশ্যই।
দুধের ব্যবসা:
গ্রামের দিকে অধিকাংশ বাড়িতেই থাকে গরু। এই গরুর দুধ সংগ্রহ করে তা চলে যায় শহরাঞ্চলে এবং সেখানে প্যাকেটজাত করে বা অন্যান্য পণ্য তৈরির মাধ্যমে সেই দুধ বিক্রি হয়ে থাকে।
আপনি যদি গ্রামের থেকে দুধ সংগ্রহ করে শহরে পাঠাতে পারেন তাহলে এই ব্যবসা করেও অনেক টাকা উপার্জন করা সম্ভব।
ওষুধের দোকান:
শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে ওষুধের দোকান কম থাকে। অনেক সময় গ্রামের মানুষকে ওষুধের জন্য দূর-দূরান্তে ছুটতে হয়। এমন অবস্থায় একটি ওষুধের দোকান উপার্জনের অন্যতম একটি রাস্তা হতে পারে।
আপনার যদি ওষুধের দোকান তৈরির লাইসেন্স থেকে থাকে, তাহলে গ্রামেই এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
রিটেইল শপ:
মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি কেনার জন্য যাতে দূরে না যেতে হয়, সেজন্য গ্রামেই একটি বড় রিটেইল শপ তৈরি করতে পারেন। এখানে রাখতে হবে প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসপত্র,যেগুলি মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয়। দোকান যত বড় হবে, আপনার আয় অত বেশি হবে।
পোল্ট্রি ফার্ম:
বড় বড় পোল্ট্রি ফার্ম কোম্পানিগুলি অনেক সময় গ্রামের মানুষদের কাছে ছোট মুরগি দিয়ে আসে এবং সেখানে লালন পালন করার পর মুরগি বড় হলে আবার পুনরায় তা সংগ্রহ করে নেয়া হয়।
আপনার যদি জায়গা থেকে থাকে এবং উপযুক্ত পরিকাঠামো থেকে থাকে তাহলে পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা অন্যতম একটি ব্যবসা হতে পারে। এখানে আপনাকে বড় কোন সংস্থার থেকে ছোট মুরগি আনতে হবে এবং সেগুলি লালন পালন করার পর পরবর্তীকালে তাদের কাছেই বিক্রি করে দিতে হবে।
মুক্তো চাষ:
আপনার যদি একটি বড় পুকুর থেকে থাকেন তাহলে সেটিকে ব্যবহৃত অবস্থায় না ফেলে রেখে মুক্তার চাষ শুরু করতে পারেন। বর্তমানে অনেক গ্রামবাসীরা তাদের পুকুরে মুক্তোর চাষ করে থাকেন। এই বিষয়ে আরো বিশদে জানতে আপনার আর বিভিন্ন ইউটিউব ভিডিও বা সরকারি সংস্থার সাহায্য নিতে পারেন।
তেলের মিল:
পুঁজি বেশি থাকলে একটি তেলের মিলের মেশিন কিনতে পারেন এবং সেটিকে ব্যবহার করতে পারেন উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে। এখানে সয়াবিন, সরষে ইত্যাদি থেকে তেল বের করে তা বিক্রি করতে পারেন বা ভাঙ্গানোর কাজও করতে পারেন। এই কাজেও প্রত্যেক দিন কয়েকশ টাকা থেকে কয়েক হাজার পর্যন্ত উপার্জন সম্ভব।
আদা রসুনের পেস্ট তৈরি:
এখনকার দিন মানুষের সময়ের অনেক অভাব। তাই বর্তমানে খাবার দাবারও অনলাইনে অর্ডার করা হয়। তরকারিতে ব্যবহার করা হয় এরকম দুটি অন্যতম মসলা হলো আদা এবং রসুন। এখন বিভিন্ন দোকানে আদা এবং রসুনের পেস্ট কিনতে পাওয়া যায়।
আপনি যদি আদা এবং রসুনের পেস্ট তৈরি করে তা প্যাকেটজাত করে বিক্রি করতে পারেন, তাহলে এই কাজ থেকেও অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন। যদি মনে হয় গ্রামের দিকে ক্রেতা নেই, তাহলে ভেঙে পড়ার কিছুই নেই। কারণ বর্তমানে শহরের দিকে আদা এবং রসুনের পেস্ট এর ব্যাপক চাহিদা। তাই আপনারা সহজেই শহরে এই জিনিসটি বিক্রি করতে পারবেন।
ইন্টারনেট ক্যাফে:
আপনার বাড়িতে যদি অতিরিক্ত জায়গা থেকে থাকে, তাহলে আপনারা সেই জায়গাটি খালি খালি ফেলে না রেখে একটি ছোট সাইবার ক্যাফ(Cyber Cafe) হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
বর্তমানে বহু ছেলে মেয়েরা চাকরি ফর্ম ফিলাপ করার জন্য সাইবার ক্যাফের উপর নির্ভর করে থাকে। পাশাপাশি ইলেকট্রিক বিল দেওয়া, ক্রেডিট কার্ড বিল দেওয়া, ট্রেন ও প্লেনের টিকিট কাটা ইত্যাদি কাজের জন্য দরকার হয় সাইবার ক্যাফের।
তাছাড়া বর্তমানে প্রিন্ট করা, ছবি তোলা, ছবির প্রিন্ট বের করা, লেমিনেশন(Lamination) করা ইত্যাদি কাজ ও সাইবার ক্যাফের মাধ্যমে করা হয়। আপনারা যদি এই কাজগুলি সাইবার ক্যাফের মাধ্যমে করতে পারেন, তাহলে প্রতিটি কাজ পিছু আপনারা বেশ মোটা পার্সেন্ট এর উপার্জন করতে পারবেন ব্যয়ের তুলনায়।
বর্তমানে চাকরির প্রতিটি ফর্ম ফিলাপ(Govt Job Form Fillup) পিছু সাইবার ক্যাফেতে ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। যে কোন রকম বিল পরিশোধের(Bill Payment) ক্ষেত্রেও নেওয়া হয় অতিরিক্ত ১০ থেকে ২০ টাকা। প্রতিদিন আপনি যদি আপনার দোকানে ১০০ জন গ্রাহকও পেয়ে থাকেন, তাহলে মাথাপিছু নুন্যতম ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা ইনকাম হলে, দিনের শেষে আপনি উপার্জন করতে পারবেন ২০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত। যা মাসের শেষে মোটা অংকের টাকায় পরিণত হবে।