বর্তমানে প্রত্যেকেই চায় স্বাবলম্বী হতে। চাকরির বাজার ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসায় ব্যবসা এবং কাজের দিকে মানুষ বেশি মন দিচ্ছে। এর আগেও আমরা বাড়িতে অল্প জায়গার মধ্যে কিরকম ব্যবসা করা যায়, সে সম্পর্কে বলেছিলাম। এছাড়া গ্রামের মানুষদের জন্য সেরা কিছু ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কেও লেখা হয়েছিল আগের প্রতিবেদনে।
আজ আপনাদের এমন একটি বিজনেস আইডিয়া সম্পর্কে জানাবো, যার মাধ্যমে আপনার প্রতি ঘন্টায় এক হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন।
বর্তমানে বাড়ি থেকে শুরু করে প্রতিটি দোকানে, রাবার ব্যান্ড বা গার্ডারের ব্যবহার বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। উত্তর ভারতের দিক গুলিতে রাবার ব্যান্ড তৈরির ব্যবসা রমরমিয়ে চলায় আমাদের রাজ্যে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে গার্ডার বা রবার ব্যান্ড এর দাম একটু বেশি। আপনি আপনার এলাকায় নিজের উদ্যোগে গাডার তৈরীর ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
আপনাদের যদি রবার ব্যান্ড তৈরি করে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হবার পরিকল্পনা থাকে, তবে এই প্রতিবেদনটি মন দিয়ে পড়ুন। এই প্রতিবেদনে রবার ব্যান্ড তৈরির ব্যবসার সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব তথ্য জানানো হবে।
রাবার ব্যান্ড তৈরির ব্যবসা কিভাবে শুরু করা যায়?
(How to start rubber brand manufacturing business?)
রাবার ব্যান্ড বা গার্ডার এর ব্যবসা আপনি দুই ভাবে শুরু করতে পারেন। আপনি বাজার থেকে রবার ব্যান্ডের টিউব কেন সেগুলি কেটে গার্ডার বানাতে পারেন। বা বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে রবার ব্যান্ড টিউব তৈরি করতে পারেন নিজেই। তারপর সেগুলি কেটে বাজারে বিক্রি করতে পারেন গার্ডার হিসেবে হিসেবে। অল্প কিছু জায়গার মধ্যেই আপনি এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। এই ব্যবসার জন্য আপনার দরকার কিছু দক্ষ শ্রমিক এবং ইলেকট্রিসিটি।
গাডার তৈরির কাঁচামাল কি কি?
(Raw Materials for making Rubber bands)
গাডার তৈরির ব্যবসা করতে প্রধান কাঁচামাল হিসেবে রাবার ব্যান্ড টিউব কিনতে হবে। এছাড়া আপনি যদি নিজে উদ্যোগের রাবার ব্যান্ড টিউব বানাতে চান, তবে কিছু টেলকম পাউডার এবং কিছু কেমিক্যাল কিনে এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন খুব ছোট করে। সম্পূর্ণ কাঁচামাল গুলির তালিকা হলো:
- রাবার কালার কেমিক্যাল পাউডার
- লেটেস্ট
- ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড
- লবণ
আপনি যদি রবার ব্যান্ড টিউব তৈরি করতে চান তবে এইগুলি আপনার কাজে লাগবে। আপনি যদি শুধুমাত্র টিউব কিনেই রাবার ব্যান্ডের ব্যবসা করতে চান, সে ক্ষেত্রে আপনাকে কাঁচামাল হিসেবে শুধুমাত্র রাবার ব্যান্ড টিউব কিনলেই হবে।
রাবার ব্যান্ড তৈরীর কাঁচামাল কোথায় কিনতে পাওয়া যায়?
(Where to buy raw materials for making rubber bands?)
রাবার ব্যান্ড তৈরি করতে গেলে যে রাবার ব্যান্ড টিউব দরকার হয়, তা আপনি যে কোন সাধারণ বাজারে পাবেন না। আপনাকে বড় কোন পাইকারি বাজার বা ম্যানুফ্যাকচারের কাছ থেকে এটি কিনতে হবে। বর্তমানে যেহেতু উত্তর ভারতের প্রায় সকল জায়গাতে এই ব্যবসা চলে, তাই এই সমস্ত জায়গা থেকেও আপনি কম দামে রাবার ব্যান্ড টিউব কিনতে পারবেন। বড় কোন কেমিকাল শপ থেকে আপনি কেমিক্যাল গুলো কিনে ফেলতে পারবেন।
গাডার তৈরির ব্যবসায় কি মেশিন লাগে?
(What machines are needed in the business of making gadar?)
গাডার তৈরির জন্য আপনাকে রবার কাটিং মেশিন কিনতে হবে। বাজারে বিভিন্ন দামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মেশিন পাওয়া যায়। এই ব্যবসার জন্য মেশিন অবশ্যই দরকারি, কারণ মেশিন ছাড়া নির্দিষ্ট মাপের গার্ডার তৈরি করা যায় না।
রাবার ব্যান্ড তৈরির মেশিনের দাম কত?
(What is the cost of rubber band making machine?)
আগেই বলা হয়েছে যে রবার ব্যান্ডের ব্যবসা করার জন্য অবশ্যই একটি রাবার কাটার মেশিন প্রয়োজন হবে। বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানি তাদের মেশিনের বিভিন্ন রকম দাম নির্ধারণ করে। ইন্ডিয়ামার্ট ওয়েবসাইট থেকে আপনারা মেশিন অর্ডার দিতে পারবেন। পঞ্চাশ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা দামের মধ্যে আপনি এই মেশিন পেয়ে যাবেন।
রাবার ব্যান্ড তৈরির মেশিন কোথায় কিনতে পাওয়া যায়?
পশ্চিমবঙ্গের যেহেতু রবার ব্যান্ড তৈরির ব্যবসা সে রকম ভাবে চালু হয়নি সেজন্য এখানে কোন ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানি মেশিন বানায় না। মেশিন কিনতে গেলে আপনাকে ভারতের অন্য রাজ্য থেকে অর্ডার করতে হবে। তবে বড় বাজারে কিছু বিক্রেতা এই ধরনের মেশিন এবং কাঁচামালও বিক্রি করে থাকেন। আপনি বড় বাজারের কোন বড় দোকানে যোগাযোগ করে এই মেশিন সংগ্রহ করতে পারবেন।
কিভাবে গাডার তৈরি করা হয়?
(How Rubber bands are made?)
রাবার ব্যান্ড তৈরির ব্যবসা সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে রবার ব্যান্ড টিউব তৈরি করা সম্পর্কে জানতে হবে। আপনি যদি রবার ব্যান্ড টিউব সরাসরি কিনে আনতে পারেন তবে সেটি কেটে গাডার তৈরি করে ফেলতে পারবেন।
তবে রাবার ব্যান্ড টিউব তৈরি করতে গেলে আপনাকে পুরো পদ্ধতিটি সম্পর্কে বিশদে জানতে হবে।
- প্রথমে রাবার কালার এর কেমিক্যাল নিয়ে তাতে এক লিটার জল মিশিয়ে ভালো করে মিক্সিং করতে হবে।
- মিশ্রণটি তৈরি হয়ে গেলে লেটেক্সে মিশ্রণটি ঢেলে দিতে হবে এবং ভালো করে মেশাতে হবে।
- রাবার ব্রান্ড টিউবের ডাইস্টি লবণাক্ত জলে ডুবিয়ে নিতে হবে। এরপর কিছুক্ষণের জন্য জল ছাড়া অবস্থায় রেখে দিতে হবে।
- এরপর রাবার ব্র্যান্ড ডাইস লেটেক্সের মধ্য ভালো করে ডুবিয়ে নিতে হবে। এরপর একদিনের জন্য শুকনো করতে হবে।
- ভাল করে শুকনো হয়ে গেলে মাথার দিকে একটুখানি কেটে নিয়ে জল ঢুকিয়ে টিউবগুলি বাইরের দিকে বের করতে হবে।
- তারপর সমস্ত টিউবগুলি ভালো করে জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে প্রায় এক থেকে পাঁচ ঘন্টার মত।
- এরপর প্রতিটি টিউব নিয়ে রাবার ব্যান্ড মেকিং মেশিনে সেট করে কাটতে হবে। এগুলো কেটেই রাবার ব্যান্ড তৈরি করা হয়।
- এইভাবে তৈরি হওয়া গাডার গুলি নির্দিষ্ট ওজন মত মেপে নিতে হবে এবং প্যাকেজিং করতে হবে বাজারে বিক্রির জন্য।
গাডার তৈরির ব্যবসা করতে কত বড় জায়গার প্রয়োজন?
গাডার তৈরির ব্যবসার জন্য একটু বড় জায়গা দরকার হয়। শুধুমাত্র গার্ডার কাটিং করার জন্য বেশি জায়গার দরকার পড়ে না। তবে যদি আপনি সম্পূর্ণ পদ্ধতিতে রাবার ব্যান্ড টিউব তৈরি করেন, সেক্ষেত্রে আপনার বড় জায়গা দরকার পড়বে। আপনি যদি শুধুমাত্র মেশিন কিনে ব্যবসা করতে চান , সে ক্ষেত্রে ১০০ বর্গফুট ঘর এর জন্য যথেষ্ট। তবে সম্পূর্ণ পদ্ধতি মেনে রবার ব্যান্ড তৈরি করতে গেলে কমপক্ষে ৩০০ বর্গফুটের ঘর দরকার হবে।
রাবার ব্যান্ড তৈরির ব্যবসা করতে কি কি লাইসেন্স লাগে?
(Do you need a license to make rubber bands?)
প্রতিটি ব্যবসার ক্ষেত্রেই লাইসেন্স নিয়ে রাখলে তা অনেক উপকারী হয়। রাবার ব্যান্ড তৈরির ব্যবসা যেহেতু কেমিক্যাল রিলেটেড ব্যবসা, সেজন্য আপনাকে কেমিক্যালের জন্য লাইসেন্স নিয়ে রাখতে হবে। আরো বেশ কিছু লাইসেন্স নিয়ে আপনি আপনার ব্যবসা শুরু করতে পারবেন, যেমন:
- ট্রেড লাইসেন্স
- MSME রেজিস্ট্রেশন
- আধার উদ্যোগ লাইসেন্স
- ট্রেডমার্ক
- জি এস টি নাম্বার
এখন যেহেতু অনলাইনের মাধ্যমেই সবকিছু পাওয়া যায়, সেজন্য আপনি অনলাইনে মাধ্যমে আবেদন করেও এইগুলি জোগাড় করতে পারবেন।। এই সব লাইসেন্স গুলোর জন্য আপনার প্রায় তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ হবে। লাইসেন্স সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার জন্য এবং বিশদে জানার জন্য আপনার পঞ্চায়েত অফিস এবং বিডিও অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
রাবার ব্যান্ডের মার্কেটিং কিভাবে করা হয়?
যেকোনো ব্যবসা করতে গেলে মার্কেটিং করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে এমন কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে যেগুলির মাধ্যমে প্রতি দিনের তৈরি গার্ডার প্রতিদিনই বিক্রি হয়ে যায়।
- এলাকার প্রত্যেকটি ছোট এবং বড় দোকানে রিটেল মার্কেটিং এর মাধ্যমে রাবার ব্যান্ড বিক্রি করতে পারেন।
- এলাকার বড় বড়ো পাইকারি দোকান এবং হার্ডওয়ারসের দোকানে পাইকারি হিসাবে রাবার ব্যান্ড বিক্রি করতে পারেন।
- কলকাতার বড়বাজার বা অন্যান্য বড় পাইকারি মার্কেট গুলিতে রাবার ব্যান্ড বিক্রি করতে পারেন প্যাকেজিং এর মাধ্যমে।
- বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের নিজের বিজনেস একাউন্ট তৈরি করে সেগুলির মাধ্যমে আপনি আপনার পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।
- বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া যেমন facebook, google এবং youtube এ আপনি ছোট বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এবং আপনার পণ্য সম্পর্কিত পোস্ট করে দ্রুত অনলাইনে বিক্রি চালু করতে পারবেন।
- প্রতিটি দোকানে গার্ডার দরকার হয়। তাই আপনি বিভিন্ন এলাকাতে একাধিক ডিস্ট্রিবিউটার তৈরি করে তাদের মাধ্যমে আপনার পন্যের প্রসার ঘটাতে পারেন।
রাবার ব্যান্ড তৈরির ব্যবসা করতে কত টাকা লাগে?
রবার ব্যান্ড তৈরির ব্যবসা করতে আপনাকে এক লক্ষ টাকার মতো খরচ করতে হবে শুরুর দিকে। এই মেশিন কেনার জন্য আপনাকে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। এছাড়া প্রথম দিকে জায়গা বাছাই করা এবং কর্মীদের মাইনে দেওয়া নিয়ে আপনার এক লক্ষ টাকার মতো খরচ পড়ে যাবে। রাবার ব্যান্ড টিউবে এনে বিক্রি করলে আপনার এই খরচটা কম পড়বে। তবে ব্যবসা করলে পূর্ণ উদ্যমে শুরু করা উচিত, তাই সমগ্র প্রক্রিয়াটি নিজে করে তারপর বিক্রি শুরু করলে, আপনার লাভ এর পরিমাণ বাড়বে আরো।
গাডার তৈরির ব্যবসায় লাভ কত?
(How much is the profit in the business of making Gadar?)
এই ব্যবসায় যখন আপনাকে ১ লক্ষ টাকা বুঝে নিয়ে শুরু করতে হচ্ছে তেমনি আপনার লাভ হবে অনেক। প্রতি ঘন্টায় আপনি এক হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন এই ব্যবসার মাধ্যমে। গাডার তৈরির মেশিন প্রতি এক ঘন্টায় ২০ কেজি করে রাবার ব্যান্ড তৈরি করতে পারে। প্রতি কেজি রাবার ব্যান্ড বিক্রি করে আপনি ৫০ টাকা লাভ করতে পারবেন। প্রতি কুড়ি কেজিতে আপনার লাভের পরিমাণ হবে এক হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রত্যেক ঘন্টায় আপনি ১০০০ টাকা লাভ করতে পারবেন। পূর্ণ উদ্যমে এই ব্যবসা শুরু করলে , প্রত্যেক মাসে আপনার এক লক্ষ টাকা বা তারও বেশি মুনাফা হতে চলেছে।
রাবার ব্যান্ড টিউবের দাম কত?
DC টিউব 150 টাকা/কেজি দামে কেনা হয় এবং রাবার ব্যান্ড তৈরি করার পর সেগুলো 200 টাকা থেকে 250 টাকা পাইকারি দামে বিক্রি করা যায়।