এখনকার দিনে প্রায় প্রত্যেকের হাতেই রয়েছে স্মার্টফোন। দিনের বেশিরভাগ সময়টাই বিভিন্ন রকম সোশ্যাল মিডিয়া(Social Media), অ্যাপ, গেমিং ইত্যাদি নিয়েই কেটে যায়। তবে আপনার কাছে যদি স্মার্ট ফোন এবং ইন্টারনেট থাকেন তাহলে এগুলি ব্যবহার করেই আপনারা প্রত্যেক মাসে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করতে পারবেন। (Earning form Youtube)
অনলাইনের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করার যে রাস্তাগুলি আছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হল ইউটিউবে এর মাধ্যমে টাকা ইনকাম করা। আজকের এই প্রতিবেদনে আপনাদের জানানো হবে ইউটিউব থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করবেন? (How To Earn Money From YouTube)
গুগলের(Google) পরেই বিশ্বের সবথেকে জনপ্রিয় অনলাইন সার্চ ইঞ্জিন(Search Engine) হলো ইউটিউব। এখানে আপনারা বিভিন্ন রকম ভিডিও, শর্ট ভিডিও দেখতে পারবেন এবং আপনাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারবেন। পাশাপাশি কোনরকম সমস্যা হলে ইউটিউব এর মাধ্যমে তার সমাধানের ভিডিও খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। ইউটিউবে যারা ভিডিও বানিয়ে থাকেন, তাদের বলা হয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর(YouTube Content Creator)। প্রত্যেক মাসে এই কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা কয়েক হাজার টাকা থেকে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে থাকেন ইউটিউবে ভিডিও বানিয়ে।
কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করবেন?
(How To Create YouTube Channel?)
- ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্য আপনার দরকার হবে একটি মোবাইল, একটি ভ্যালিড জিমেইল আইডি, মোবাইল নম্বর এবং ইন্টারনেট। ইউটিউবে চ্যানেল খোলার জন্য কোন রকম টাকা পয়সা দরকার হয় না।
- প্রথমে আপনার মোবাইলে থাকা ইউটিউব অ্যাপটি(YouTube App) খুলতে হবে।
- জিমেইল আইডি দিয়ে লগইন(Login With Gmail Account) করতে হবে।
- Your Channel বলে একটি অপশন আসবে ডান দিকের লোগোতে ক্লিক করার পর। সেখানে ক্লিক করে আপনার চ্যানেলের নাম, লোগো এবং ব্যানার বসিয়ে সেভ করে দিলেই আপনার ইউটিউব চ্যানেল(YouTube Channel) তৈরি হয়ে যাবে।
ইউটিউবে কিভাবে ভিডিও আপলোড করতে হয়?
(How to upload video in YouTube?)
- ইউটিউবে ভিডিও আপলোড(YouTube Video Upload) করার জন্য প্রথমে আপনাকে ইউটিউব অ্যাপটি খুলতে হবে।
- এরপর আপনাকে প্লাস আইকনে ক্লিক করে আপলোড ভিডিও অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- আপনার মোবাইলে থাকার ভিডিওটি সিলেক্ট করতে হবে এবং ১০০ টি শব্দের মধ্যে আপনার ভিডিওটির বিষয়বস্তু বা টাইটেল লিখতে হবে।
- ডেসক্রিপশন বক্সে আপনার ভিডিওটি সম্পর্কে আরো কিছু লিখে দিতে পারেন।
- এরপর আপলোড অপশনে ক্লিক করলে আপনার ভিডিও আপলোড হওয়া শুরু হয়ে যাবে।
ইউটিউবে কখন ভিডিও আপলোড করলে ভাল হয়?
যখন আপনি প্রথম প্রথম একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলছেন তখন আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময়েই ভিডিও আপলোড করতে হবে। তাছাড়া ভিডিও পোস্ট করার আগে ভিডিওটি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত শর্ট ভিডিও(Short Video) অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলিতে পোস্ট করতে পারেন। তাতে করে আপনার ইউটিউব ভিডিওতে দর্শক সংখ্যা(Viewers YouTube) বাড়তে পারে।
প্রথম দিকে আপনারা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভিডিও আপলোড করতে পারেন। যেমন প্রতিদিন সকাল ন’টায় একটি করে ভিডিও। আপনারা যদি এমনভাবে ভিডিও পোস্ট করেন, আজকে সকাল ৯টা, কালকে রাত ১০টা, আগামীকাল সকাল ৭টা – এমন ভাবে ভিডিও পোস্ট করলে আপনার ভিডিওতে তেমন দর্শক আসবেনা।
ইউটিউবে কত সাবস্ক্রাইবার হলে কত টাকা পাওয়া যায়?
অনেক সময় আমরা ভাবি যে, কারো ইউটিউব চ্যানেলে অনেক সাবস্ক্রাইবার(YouTube Subscribers) আছে মানেই সে প্রত্যেক মাসে অনেক টাকা উপার্জন করছে। আসলে ব্যাপারটি তা নয়। সাবস্ক্রাইবার সংখ্যার উপর কখনোই ইউটিউবের থেকে ইনকাম নির্ভর করে না। আপনার সমস্ত ইনকামটাই নির্ভর করবে আপনার বানানো কনটেন্ট এবং তাতে আসা বিজ্ঞাপনের উপর। সেই অনুযায়ী আপনাকে কনটেন্ট তৈরি করতে হবে, এমন কনটেন্ট তৈরি করতে হবে যেটা বিজ্ঞাপনের জন্য উপযোগী এবং বেশিরভাগ দর্শক আপনার ভিডিওর প্রতি আকৃষ্ট হবে।
প্রতি ১০০০ ভিউতে ইউটিউব কত টাকা দেয়?
ইউটিউব থেকে কখনোই এমন কোন অফিসিয়াল তথ্য দেওয়া হয়নি, যাতে করে জানা যায় যে এক হাজারটি ভিউ এলে ইউটিউব আপনাকে কত টাকা দেবে। তবে আপনি যদি ভাল কনটেন্ট তৈরি করেন এবং সেখানে যদি ভালো বিজ্ঞাপন আসতে থাকে, তাহলে প্রত্যেক এক হাজার ভিউতে আপনারা তিন থেকে চার ডলার উপার্জন করে ফেলতে পারবেন।
ইউটিউবে ১ মিলিয়ন ভিউ এলে কত টাকা পাওয়া যাবে?
আবারো বলে দিই, ইউটিউব থেকে কখনো এমন কোন তথ্য দেওয়া হয় না যাতে করে ১০০০ বা ১ মিলিয়ন ভিউ প্রতি কত টাকা দেওয়া হবে তা নিশ্চিত করা থাকে। তবে আপনার ভিডিওতে যদি ভাল বিজ্ঞাপন আসতে থাকে তাহলে ১ মিলিয়ন ভিউতে আপনারা ১০০ থেকে ৫০০ ডলার পর্যন্ত উপার্জন করে ফেলতে পারবেন। তবে পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার ভিডিওর কনটেন্ট এবং তাতে আসা বিজ্ঞাপনের ওপর।
ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশনের জন্য শর্ত কি?
ইউটিউব থেকে টাকা পাওয়ার জন্য প্রথমে আপনার চ্যানেলটিকে মনিটাইজ(YouTube Monitization) করা প্রয়োজন। তার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি শর্ত।
প্রথমত আপনাকে অন্তত এক হাজার সাবস্ক্রাইবার অর্জন করতে হবে। এক বছরের মধ্যে অন্তত ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম(4000 Hours Watch Time) থাকতে হবে। যখনই আপনারা ইউটিউবের এই শর্তগুলি(YouTube Monitization Rules) পূরণ করবেন, তখন ইউটিউব থেকেই আপনাকে মনিটাইজ করার একটি অপশন দেওয়া হবে, সেটিতে ক্লিক করলে খুব সহজেই আপনি আপনার চ্যানেলটিকে মনিটাইজ করে ফেলতে পারবেন।
এখানে আপনার নাম, ঠিকানা, ব্যাংক একাউন্টের ডিটেলস ইত্যাদি দিতে হবে। যাতে করে আপনার পেমেন্ট(Payment From YouTube) পেতে কোনরকম সমস্যা না হয়।
ইউটিউব থেকে টাকা তোলার উপায় কি?
- প্রথমে অন্তত ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পূর্ণ করার পর আপনাকে মনিটাইজেশনের জন্য এপ্লাই করতে হবে। মনিটাইজেশন সম্পন্ন হলে বিজ্ঞাপন প্রতি আপনারা উপার্জন করতে থাকবেন ডলারে।
- মনিটাইজেশন এর জন্য এপ্লাই করার পর আপনার ঠিকানা তে একটি এডসেন্স পিন এর চিঠি আসবে। সেটি দেবার পর আপনার এডসেন্স একাউন্টটি ভেরিফাই করতে হবে।
- এডসেন্স একাউন্ট ভেরিফাই করার পর আপনারা ভিডিওতে যা উপার্জন করবেন তা জমা হতে থাকবে এবং ১০০ ডলার হয়ে গেলে আপনারা সেই টাকাটি তুলে নিতে পারবেন।
- ইউটিউব থেকে সাধারণত প্রত্যেক মাসের ২১ তারিখে টাকা পাঠানো হয় এবং তার পাঁচ দিনের মধ্যেই আপনার একাউন্টে সমস্ত টাকাটি পেয়ে যাবেন।
ইউটিউব থেকে প্রতি মাসে কত টাকা ইনকাম করা সম্ভব?
বর্তমানে যে সমস্ত বড় বড় কনটেন্ট ক্রিয়েটররা ইউটিউবে ভিডিও বানিয়ে থাকেন তারা প্রত্যেক মাসে 10 লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করেন বা অনেকে আছেন যাদের উপার্জনের পরিমাণ দশ লক্ষ টাকারও বেশি। তবে এমনটা হতে পারে যে, প্রত্যেক মাসে 10000 টাকাও উপার্জন হচ্ছে না।
ইউটিউব থেকে পাওয়া টাকার পরিমাণ নির্ভর করে আপনার ভিডিওতে কতগুলো বিজ্ঞাপন(YouTube Ads) আসলো তার উপরে। আপনার ভিডিওতে যদি বেশি বিজ্ঞাপন আসে সেই ভিত্তিতে আপনার বেশি মুনাফা হবে এবং বেশি টাকা আপনার google এডসেন্স একাউন্টে(Google Adsense Account) জমা হতে থাকবে।
ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় কি?
নরমালি আপনারা ভিডিও পোস্ট করতে থাকুন, এবং তাতে আসা বিজ্ঞাপন এবং দর্শক সংখ্যার ভিত্তিতে আপনারা উপার্জন করতে পারবেন।
পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানির অ্যাপ এবং প্রোডাক্টের রিভিউ(App Review) দিতে পারেন, এফিলিয়েট মার্কেটিং(YouTube Affiliate Marketing) করতে পারেন এবং অন্যান্য চ্যানেলগুলি প্রমোশনের মাধ্যমে আপনারা উপার্জন করতে পারবেন।