সোশ্যাল মিডিয়া বলতে প্রথমেই মাথায় আসে ফেসবুকের কথা। সারা বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ ব্যবহার করেন ফেসবুক। ছাত্র থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব মানুষজনও বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহার করেন। তবে ফেসবুকের বেশিরভাগ ব্যবহারকারী টিনেজার বা যুবক যুবতী।
অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে অনলাইনে টাকা উপার্জনের উপায় কি? , ফেসবুক থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায়? , মোবাইল দিয়ে ইনকাম কিভাবে করা যায়? – প্রত্যেকেরই হাত খরচের জন্য টাকা দরকার হয় এবং পরিবারের ওপর সবসময় নির্ভর না হয়ে নিজেও একটু স্বাবলম্বী হতে চেষ্টা করে সকলেই।
এসব প্রশ্নের একটাই উত্তর হতে পারে, সেটা হলো – “ফেসবুক থেকে আয় (Earning From Facebook)” ; দিনের অনেকটা সময় আমরা ফেসবুকে কাটাই। Like, Comment, Share, Post, Reels, এসব করতে করতে দিনের অনেকটা সময় আমরা ফেসবুকের পেছনেই খরচ করে ফেলি। তবে সঠিকভাবে ফেসবুক ব্যবহার করতে জানলে আমরা ফেসবুক থেকে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারব।
আজকে আপনাদের ফেসবুক থেকে কিভাবে টাকা উপার্জন করা যায় সেই ব্যাপারে বিশদে জানাব। সহজভাবে বলতে গেলে ফেসবুকে বিভিন্ন ফ্যান পেজ (Fan page), গ্রুপ, অনলাইন শপ,ভিডিও তৈরি, গেম ডেভেলপ (Game Develop) করা ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের ফেসবুক প্রোফাইলটিকে একটি বিজনেস প্লাটফর্ম (Facebook Business Platform) হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
ফেসবুক পেজ থেকে আয় কিভাবে করবেন?
(How to Earn From Facebook Page)
ফেসবুক খুললে অনেক রকম পেজ আমাদের চোখে পড়ে। তবে এই পেজ গুলির মধ্যে যে সমস্ত পেজের কনটেন্ট এবং মান ভালো হয় সেগুলি নিউজ ফিডে প্রাধান্য পায়। আপনি যদি নির্দিষ্ট একটি বিষয় নিয়ে ফেসবুক পেজ খুলে মানসম্মত কনটেন্ট পোস্ট করতে পারেন ,তবে সেটিও আপনার আয়ের উৎস হতে পারে।
আপনি ফুড রিভিউ, নিউজ পোর্টাল (News Portal),ট্রাভেল পেজ বা ট্রল পেজ খুলতে পারেন। তবে মাথায় রাখতে হবে আপনার পেজের কোন কনটেন্ট যেন কোন নির্দিষ্ট জনজাতি বা জনগোষ্ঠীকে (Community) আঘাত না করে। ফেসবুক পেজের মূল অংশ হলো কনটেন্ট। আপনার কনটেন্ট যদি ভাল হয়, তবে সকলের কাছে আপনার পেজের গ্রহণযোগ্যতা বেশি হবে।
আপনার পেজের জন্য একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট তৈরি করুন। পেজের পাশাপাশি ওয়েবসাইট ব্যবহার করলে সেটিও খুবই কার্যকরী হবে টাকা ইনকাম করার ক্ষেত্রে। আপনার পেজের কনটেন্টের সম্পর্কে বিশদে বর্ণনা করতে হবে আপনার ওয়েবসাইটে। বিনামূল্যে ওয়েবসাইট পাওয়ার জন্য আপনি ব্লগ বা ওয়ার্ডপ্রেস (Free WordPress Site) এর সাহায্য নিতে পারেন। তবে ফ্রি ডোমেইন (Free Domain) ছাড়া ও সামান্য কিছু টাকা খরচ করে আপনি নিজের জন্য একটি ফ্রেশ ওয়েবসাইট বানিয়ে নিতে পারবেন।
Google AdSense নামে গুগলের একটি প্রোগ্রাম রয়েছে। এই এডসেন্সের মাধ্যমে ইনকাম করা সারা বিশ্বে বর্তমানে খুব জনপ্রিয়। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন (Advertisement) সরবরাহ করাই কাজ এডসেন্সের। আমরা যখন কোন ওয়েবসাইট বা ফেসবুক ইউজ করি তখন বিভিন্ন রকম বিজ্ঞাপন দেখতে পাই, এগুলো বেশিরভাগই এডসেন্স আমাদের দেখায়। আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজের সাথে Google এডসেন্স যুক্ত করতে পারেন তবে বিজ্ঞাপন দেবার মাধ্যমে আপনি উপার্জন করতে পারবেন।
ফেসবুক পোস্ট বিক্রি করে কিভাবে উপার্জন করবেন?
(How To Earn From Selling Facebook Post?)
আপনি যদি আপনার ফেসবুক পেজে নিয়মিত নিত্যনতুন পোস্ট করতে থাকেন, এবং পোস্টগুলি যদি ভালো মানের হয়, তবে খুব শীঘ্রই বহু মানুষের চোখে পড়বে সেই পোস্টগুলি। তার সাথে পেজের লাইক এবং ফলোয়ারের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।
আপনার মাথায় রাখতে হবে আপনার পোস্ট করা কনটেন্টের যেন অন্য কোন কনটেন্ট এর সাথে সাদৃশ্য না থাকে। সেক্ষেত্রে কপিরাইট সংক্রান্ত মামলায় জড়িয়ে যেতে পারেন। তাই যতটা সম্ভব নিজের ইউনিট কন্টেন্ট বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
কনটেন্ট তৈরি করা হলে আপনাকে এবার কনটেন্ট বিক্রি করার দিকে এগোতে হবে। আপনার কনটেন্ট বিক্রি করার মাধ্যমেও আপনি ফেসবুক থেকে উপার্জন করতে পারেন। বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে যেখানে আপনি আপনার ফেসবুক পোস্ট বিক্রি করতে পারেন। যেমন shopsomething.com, এখানেও আপনি আপনার ইউনিক ফেসবুক কন্টেন্ট বিক্রি করতে পারেন। এখানে আপনার একটি অ্যাকাউন্ট খুলে আপনার পোস্টগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট মূল্য ধার্য করতে হবে।
বিভিন্ন কোম্পানি থেকে নির্দিষ্ট মূল্য দিয়ে এই পোস্টগুলি আপনার থেকে কিনে নেওয়া হবে এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের জন্য এই সমস্ত পোস্ট বা পোস্টের ছবি ব্যবহার করা হবে। প্রথমদিকে মাত্রাতিরিক্ত দাম না চাওয়াই ভালো, চড়ামূল্যে কোন পোস্ট বিক্রি করতে গেলে বেশিরভাগই আগ্রহ দেখাবে না।
অ্যাফিলিয়েট অ্যাডভারটাইজিং এর মাধ্যমে কিভাবে উপার্জন করবেন?
(How To Earn From AFFILIATE ADVERTISING?)
আপনারা অনেকেই হয়তো অ্যাফিলিয়েট এডভারটাইসিং এর নাম শুনেছেন বা হয়তো দেখেছেনও। ফেসবুকের নিউজ ফিডস স্ক্রল করতে করতে আমরা এমন অনেক পেজের পোস্ট দেখতে পাই, যে পেজগুলি আমাদের লাইক বা ফলো করা থাকে না। এই পোস্ট গুলির নিচে ছোট করে স্পনসর্ড (Sponsored) লেখা থাকে। এটিকেই বলা হয় এফিলিয়েট অ্যাডভারটাইজিং।
গুগল থেকে বিশ্বস্ত কোন এফিলিয়েট অ্যাডভারটাইজিং প্রোগ্রাম আপনাকে প্রথমে খুঁজে নিতে হবে। তারপর Sign Up করলে আপনাকে একটি আইডি দেওয়া হবে। সেই সাথে আপনাকে একটি বিজনেস ম্যাটেরিয়াল দেওয়া হবে।
এবার বিভিন্ন ইউজারদের দ্বারা জেনারেট এর মাধ্যমে অর্থ জমতে থাকবে আপনার একাউন্টে। অ্যাফিলিয়েট এডভারটাইজিং প্রোগ্রাম এর জন্য একটি আলাদা ফেসবুক একাউন্ট খুলতে পারেন আপনি। প্রতিটা বিজ্ঞাপনের জন্য যদি আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে আপনার উপার্জন বাড়বে। আপনার বিজ্ঞাপন যত মানুষ দেখবে বা যত জন আপনার লিংকে ক্লিক করবে সেই সংখ্যার উপর বিচার করে আপনার উপার্জন ও বাড়তে থাকবে।
ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে ফেসবুক পেজ থেকে আয়:
(Earning From Facebook Page Freelancing)
Online Earning বলতে প্রথমেই Freelancing এর কথা মাথায় আসে। তবে Facebook এর মাধ্যমেও ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন আপনি। ফেসবুকে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত গ্রুপ (Freelancing Group Facebook) পেয়ে যাবেন। এখানে বিভিন্ন মেম্বাররা কাজের অনেক অপারচুনিটি শেয়ার করে। Content Writing, Graphics Designing, Online Marketing এর মত বিভিন্ন বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং এর সুযোগ পাওয়া যায় গ্রুপগুলো থেকে।
ফেসবুকে অনলাইন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উপার্জন:
(How To Earn From Facebook Online Competition)
বিভিন্ন কোম্পানিগুলি অনেক সময় তাদের পণ্য এবং সার্ভিস প্রমোশন (Service Promotion) করার জন্য অনেক অনলাইন কম্পিটিশন (Online Competition) আয়োজন করে থাকে। প্রতিযোগিতা গুলির উদ্দেশ্য থাকে কোম্পানীগুলির পণ্যের প্রচার করা। সোশ্যাল মিডিয়াতে যেহেতু অনেক মানুষ থাকেন, সেই জন্য কোম্পানিগুলি তাদের প্রোডাক্টের প্রমোশনের জন্য ফেসবুকই বেছে নেয়। এই প্রতিযোগিতা গুলির পুরস্কার হিসেবে থাকে মোটা অংকের টাকা, দামী পুরস্কার বা সেই কোম্পানিগুলিতে Internship এর সুযোগ মেলে বিজয়ীদের।
অনেক সময় এই প্রতিযোগিতা গুলির নিয়ম খুব সোজা হয়। বেশি লাইক, শেয়ার এবং বন্ধুদের ট্যাগ করার মাধ্যমেও আপনি প্রতিযোগিতার উইনার হতে পারেন।
ফেসবুক অনলাইন মার্কেটিং এর মাধ্যমে উপার্জন:
(Earning From Facebook Online Marketing)
Online Marketing টাকা উপার্জন করার অন্যতম একটি উপায়। আপনি ফেসবুকের মাধ্যমেও অনলাইন মার্কেটিং করতে পারবেন। বর্তমানে ফেসবুকের মাধ্যমেই ড্রেস, জুয়েলারি, মেকআপ, ফিটনেস ইত্যাদির অনলাইন শপ গড়ে উঠেছে।
ফেসবুকে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটিং পেজ বা গ্রুপ এভেলেবেল রয়েছে। এখানে বিভিন্ন পণ্যর ছবি, বিবরণ এবং দাম দেওয়া থাকে। গ্রাহকরা ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের পছন্দমত জিনিস অর্ডার করেন। অনলাইন এবং ক্যাশ অন ডেলিভারি (Cash On Delivery) উভয়ের মাধ্যমেই টাকা পেমেন্ট করা যায়।
আপনি যদি আপনার কোন পণ্যের ব্যবসা ফেসবুকের মাধ্যমে করতে পারেন তবে আপনার ব্যবসার বাজার ক্রমশ চওড়া হতে থাকবে। ফেসবুক অ্যাপ এর মধ্যেই ফেসবুক মার্কেটপ্লেস (Facebook Marketplace) বলে একটি অপশন পেয়ে যাবেন যেখানে জিনিসপত্র কেনাবেচার সুযোগ রয়েছে। ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে আপনি আপনার নিজের ওয়েবসাইটে থাকা পণ্য ও বিক্রি করতে পারবেন। ফেসবুক মার্কেট নামে একটি অ্যাপ রয়েছে যেখান থেকেও আপনি এই সুবিধা সরাসরি গ্রহণ করতে পারবেন।
ফেসবুকে অ্যাপ তৈরির মাধ্যমে উপার্জন:
(Earning From App Development In Facebook)
Web Designer, Game Developer এবং Programmer এর জন্য ফেসবুকে রয়েছে টাকা উপার্জনের সুযোগ। নিজস্ব অ্যাপ তৈরি করার মাধ্যমে আপনি ফেসবুক থেকে উপার্জন করতে পারবেন। আপনি যদি ফেসবুকের জন্য বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করেন, তবে সেই অ্যাপে ইউজারদের সংখ্যা বিচার করে আপনাকে পেমেন্ট করা হবে ফেসবুকের(Payment From Facebook) পক্ষ থেকে। এছাড়া আপনি বিভিন্ন গেম আপলোড করার মাধ্যমেও ইনকাম করতে পারবেন ফেসবুক থেকে।
অ্যাকাউন্ট সেল করা:
(Facebook Account Sale)
ধরুন আপনার একটি পুরনো ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ আছে, সেটি বিক্রি করে আপনি কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন। আগে একটা সময় অনেকের একাধিক প্রোফাইল এবং পেজ থাকতো, ফলোয়ার সংখ্যাও হতো অনেক বেশি। এজন্য পুরনো একাউন্ট, পেজ এবং গ্রুপের অনেক দাম। অনেক সেলার এবং নতুন পেজ এডমিনরা এমন পুরনো পেজ, প্রোফাইল কিনে নিজেদের ব্যবসার কাজে ব্যবহার করেন। তাদের কাছে আপনার পেজ বা প্রোফাইল বিক্রি করে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং:
(Influencer Marketing)
নামকরা কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা, পণ্য এবং সার্ভিস প্রচার করার জন্য স্বনামধন্য ও ফেমাস ব্যক্তিদেরকে তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে বা বিজ্ঞাপনদাতা হিসাবে নিযুক্ত করে।
ফেসবুকে ইনফ্লুয়েন্সার হতে গেলে আপনাকে মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। ফলোয়ার থাকতে হবে অনেক। অনেক ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেট এজেন্সি পাবেন আপনি গুগলে, যেমন Hireinfluence, BlogMint, Fromote – এগুলোতে আপনার একাউন্ট খুলতে পারেন। অ্যাকাউন্ট খোলার পর অনেক কোম্পানির বিভিন্ন প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস প্রমোশন করার অফার পাবেন আপনি। প্রমোশন (Facebook Promotion) এর মাধ্যমেও আপনি ফেসবুক থেকে উপার্জন করতে পারবেন।
ক্রয়-বিক্রয় এর মাধ্যমে ফেসবুক থেকে উপার্জন:
ধরুন আপনার বাড়িতে একটি পুরনো মোবাইল বা ক্যামেরা পড়ে আছে। সেটি খুব সহজেই আপনি ফেসবুকের মাধ্যমে বিক্রি করে দিতে পারেন। ফেসবুক এ অসংখ্য এমন Buy and Sale গ্রুপ রয়েছে, সেখানে খুব সহজেই আপনি আপনার পণ্য বা পুরনো জিনিস বিক্রি করতে পারবেন এবং উপার্জন করতে পারবেন।
রিল তৈরির মাধ্যমে উপার্জন:
ফেসবুকে রিল (Facebook Reel) পোস্ট করার মাধ্যমেও আপনি উপার্জন করতে পারবেন। নিয়মিত ভিডিও পোস্ট করতে হবে এখানে আপনাকে। Star এর মাধ্যমেও উপার্জন করা যায় ফেসবুক রিল থেকে। এছাড়া আপনার পেজে অ্যাডসেন্স অন করে রাখলে রিলস এ ভিউ (Reel Views) এবং লাইক কমেন্ট এর সংখ্যার ওপরেও ফেসবুক সরাসরি আপনাকে টাকা দেবে।
তাই শুধুমাত্র কিছু লাইক কমেন্ট এবং শেয়ারের বেড়াজালে আবদ্ধ না থেকে, টাকা উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে facebook কে ব্যবহার করতে শিখুন। আপনি ঘরে বসে সামান্য কিছু সময় ব্যয় করেই ফেসবুক থেকে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারেন। অল্প সময়ের মধ্যেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারবেন, এবং দিনে দিনে আপনার উপার্জন আরো বাড়তে থাকবে।