নিজের অদম্য জেদ এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে অনেক গরিব পরিবারের সন্তানরাও ভবিষ্যতে অনেক বড় বড় চাকরি পেয়ে সাফল্য অর্জন করেন। পরবর্তীকালে তাদের সাফল্যের গল্প বহু ছেলেমেয়েদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়ায়। আজকে আপনাদের এমনই একজনের সম্পর্কে বলবো।
ছোট থেকে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। পরিবারের সাথে জমিতে কাজ করতে হতো ছোট থেকেই। নিম্নবিত্ত একটি চাষী পরিবারে জন্ম নিয়ে নিজের অদম্য জেদ এবং অধ্যবসায়ের জেরে বর্তমানে তিনি একজন সফল DSP।
বর্ধমানে জন্ম আনন্দ মণ্ডলের। ছোট থেকে সাধারণ মাপের ছাত্র ছিলেন তিনি। গ্রামের শুভাকাঙ্ক্ষী কিছু মানুষজন ছোট থেকেই তাকে পড়াশোনার জন্য উৎসাহিত করতেন এবং তাদের বাবা-মাকেও উৎসাহিত করতেন ছেলেকে পড়ানোর জন্য। আনন্দ মণ্ডল যখন চাষের জমিতে কাজ করতেন তখন সেই সমস্ত মানুষেরা তার বাবা-মাকে বোঝাতেন যে ছেলেকে ভালোভাবে পড়ালে একসময় এই কাজ আর তাদেরকে করা লাগবে না।
২০১৩ সালে আনন্দ মন্ডল মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০১৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন এবং ২০১৮ সালে ইংরেজি অনার্স নিয়ে স্নাতক কমপ্লিট করেন। স্নাতক পড়তে পড়তে তিনি তার চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং স্নাতক সম্পূর্ণ হবার পরে পুরোদমে WBCS পরীক্ষার ওপর মন দেন তিনি। একসময় তার কাছে দুটো অপশন খোলা ছিল, একটা WBCS পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, অন্যটি লেবার হিসাবে কাজ করা। তিনি প্রথম অপশনটিই বেছে নেন।
উচ্চস্তর শিক্ষা জগতে প্রবেশ করার সময় থেকেই তার লক্ষ্য ছিল WBCS পাশ করা এবং স্বপ্ন ছিল পুলিশ এর চাকরি করা। সেই স্বপ্নের পথে চলার পথও খুব একটা সহজ ছিল না তার।
কম্পিটিটিভ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবার জন্য তিনি বাড়ি ছাড়েন। একটি প্রাইভেট কোচিং এ ভর্তি হন। সেখানকার বেতন দেবার জন্য জমি বিক্রি করে দিতে হয় তার পরিবারকে। এছাড়া চাষের কাজ থেকে যেটুকু টাকা পয়সা পাওয়া যেত, তার কিছুটা অংশ তাকে তার বাবা-মা পাঠিয়ে দিত পড়াশোনার জন্য। বাড়ি ছাড়ার সময় তিনি বলেছিলেন চাকরি পেয়ে তবেই বাড়িতে ফিরবেন।
জমি বিক্রি করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, জমি বিক্রি করার ক্ষেত্রে তার মনে হয়েছিল যে স্বপ্নের চাকরি পেয়ে গেলে দু বছরের মধ্যেই জমির টাকা তিনি আবার উপার্জন করে নিতে পারবেন। কোচিং এর বেতন বাবদ প্রায় দেড় বিঘা জমি বিক্রি করে দিতে হয় তাদেরকে। তবে বর্তমানে তিনি যে চাকরি পেয়েছেন তাতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেই পুরনো জমি উদ্ধার করে নিতে খুব একটা বেশি সময় লাগবে না।
২০২০ সালের WBCS পরীক্ষার গ্রুপ-বি পদে ১৭ র্যাংক করেন আনন্দ মন্ডল। বর্তমানে তিনি একজন সফল DSP।
এই অসাধারণ সাফল্যে খুশি আনন্দ মন্ডল এবং তার পরিবারের সকলে। তিনি সম্প্রতি ফেসবুকে তার জার্নির একটি সংক্ষিপ্ত গল্প পোস্ট করেছেন। যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা বর্তমানে WBCS পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্যে আনন্দ মন্ডলের একটি ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী দিনে হয়তো বহু ছাত্র-ছাত্রীরা আনন্দ মণ্ডল কে তাদের অনুপ্রেরণা মেনে সামনে এগিয়ে যাবেন।