আমাদের শরীরের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো চোখ। চোখ ছাড়া আমরা পৃথিবীর সৌন্দর্যের এক বিন্দুও উপভোগ করতে পারতাম না। তাই চোখ ভালো রাখার জন্য এবং দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য আমাদের চোখ এর সবসময় যত্ন নেওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য একটি প্রকল্প চালু করেছেন।এই প্রকল্পের নাম চোখের আলো প্রকল্প (Chokher Alo Scheme)।
চোখের আলো প্রকল্পের উদ্দেশ্য কি?
২০২৫ সালের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত মানুষ যাতে চোখের সমস্যা থেকে মুক্তি পান, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে চালু করা হয়েছিল চোখের আলো প্রকল্পটি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বয়স্কদের চোখের ছানি অপারেশন করা হবে এবং ছোটদের এবং নবীন ,প্রবীনদের অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা যাবে। এই প্রকল্পের অধীনে 60 বছরের বেশি বয়স্ক মানুষদের চোখের ছানি অপারেশন সম্পূর্ন বিনামূল্যে করা হবে। বিনামূল্যে রাজ্যের ২০ লক্ষরও বেশি মানুষের ছানি অপারেশন করা হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন যে আগামী ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে সমস্ত রাজ্যবাসীর বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা করা হবে। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারাই এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন।
চোখের আলো প্রকল্পের সুবিধা কি?
প্রথমত রাজ্যের কুড়ি লক্ষ মানুষের বিনামূল্যে ছানি অপারেশন করা হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।
গরিব মানুষদের জন্য বিনামূল্যে চশমা দেওয়া হবে।
রাজ্য সরকারি স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা করা হবে এবং যদি তাদের চশমা দরকার হয়, তবে বিনামূল্যে প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হবে চশমা।
৬০ বছর বয়সের বেশি বয়স্ক মানুষদের বিনামূল্যে স্থানীয় অপারেশন করা হবে।
রাজ্যের প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষ বিনামূল্য চশমা পাবেন।
রাজ্যের অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রগুলিতেও শিশুদের জন্য চক্ষু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে চোখের আলো প্রকল্পের মাধ্যমে।
চোখের আলো প্রকল্প কবে চালু করা হয়েছিল?
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যবাসীদের জন্য চোখের আলো প্রকল্প চালু করা হয়েছিল 2021 সালের জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ এবং এই প্রকল্প এখনো চলছে।।
চোখের আলো প্রকল্পের সুবিধা কোথায় কোথায় পাওয়া যায়?
বর্তমানে রাজ্যের প্রায় ১২০০ গ্রাম পঞ্চায়েত ও ১২০ টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চোখের আলো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ধীরে ধীরে রাজ্যের সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত এবং শহরকে চোখের আলো প্রকল্পের আওতার অধীনে আনা হবে বলে জানানো হয়েছে।
চোখের আলো প্রকল্পটি কত দিন চলবে?
চোখের আলো প্রকল্পটি যখন শুরু করা হয়েছিল তখন বলা হয়েছিল যে এই প্রকল্পটি পাঁচ বছর চলবে। যেহেতু এই প্রকল্পটি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের শুরু করা হয়েছিল, তাই বলা যায় যে এই প্রকল্পটি ২০২৫ সালের শেষ অবধি চলতে পারে।
চোখের আলো প্রকল্পে কতজন সার্জেন্ট এবং চিকিৎসক রয়েছেন?
রাজ্য সরকারের চোখের আলো প্রকল্পে রাজ্যবাসীর চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ৩০০ জনেরও বেশি চোখের সার্জেন্ট ও ৪০০ জনের বেশি অপ্টোমেট্রিস্ট এই কাজের সাথে যুক্ত থাকবেন।
চোখের আলো প্রকল্পের সাফল্য:
রাজ্য সরকার মাত্র 17 দিনে প্রায় আড়াই লক্ষেরও বেশি মানুষের ঘরে ঘরে চক্ষু রোগের চিকিৎসা করে দেখিয়ে দিয়েছে। কার্যত এ এক প্রকার রেকর্ড বলা চলে। আশা করা যাচ্ছে যে আগামী দিনে আরো বহু সংখ্যক মানুষ এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হবেন। এই প্রকল্পটি চালুর প্রথম ১৭ দিনের মধ্যে যারা উপকৃত হয়েছেন তাদের কাউকে হাসপাতালে গিয়ে লাইন দেওয়া লাগেনি বা অপেক্ষা করা লাগেনি। প্রত্যেকের বাড়িতেই চিকিৎসার সমস্ত সামগ্রী নিয়ে ডাক্তারেরা পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং বাড়িতেই তাদের চিকিৎসা করা সম্ভব হয়েছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের বহু সংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়েছে এবং আগামী দিনে আরো বহু সংখ্যক মানুষ উপকৃত হবে। ছোট থেকে বড় প্রায় সকলেই পাচ্ছেন এই প্রকল্পের সুবিধা। গরিব এবং মধ্যবিত্ত যে সমস্ত পরিবারের টাকা দিয়ে চিকিৎসা করার সমর্থ্য নেই, বা অর্থের অভাব – তাদের জন্য এই প্রকল্প সত্যিই আশার আলো। আগামী দিনে আরো বহু সংখ্যক মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চলেছে এই চোখের আলো প্রকল্প।
গুরুত্বপূর্ণ নথি:
আধার কার্ড
ভোটার আইডি কার্ড
ঠিকানা প্রমাণ
মোবাইল নম্বর
পাসপোর্ট সাইজ ছবি
২০২৫ সালের মধ্যে রাজ্য সরকার কমপক্ষে ২০ লক্ষ প্রবীণ নাগরিকের ছানি অপারেশন এর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। প্রায় ৮.২৫ লক্ষ বয়স্ক ব্যক্তিদের বিনামূল্যে চশমা দেওয়া হবে যারা ছানি অস্ত্রোপচার করবেন।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লক্ষ পড়ুয়াদের চক্ষু পরীক্ষা করা হবে বিনামূল্যে, এবং এদের মধ্যে ৪ লক্ষ পড়ুয়াকে চশমা দেওয়া হবে।
চোখের আলো প্রকল্পে কারা আবেদন করতে পারবেন?
আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের একজন স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। এছাড়াও আবেদনকারীকে একজন সিনিয়র সিটিজেন হতে হবে বা রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বা রাজ্যের ছাত্র হতে হবে।