ভারতে ঠাকুরের প্রসাদ বললে প্রথমেই মাথায় আসে বাতাসার কথা। ভারতের প্রায় প্রতিটা রাজ্যেই প্রসাদ হিসেবে বাতাসা দেওয়া হয়। আগেকার দিনে বাড়িতে অতিথি আসলে তাকে জলের সাথে বাতাসা দেওয়া হতো। বাতাসার বাজার যেহেতু অনেক বড়, তাই আপনি যদি বাতাসা তৈরি শিখে বিক্রি করতে পারেন, খুব তাড়াতাড়ি আপনি হাজার হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন। আপনি যদি বাতাসা তৈরি করে স্বাবলম্বী হতে চান তবে আজকের এই প্রতিবেদন আপনার জন্য। এর আগেও আমরা বাড়িতে বসে কি কি ব্যবসা করা যায় সেই ব্যাপারে লিখেছি।
আজকে আপনাদের জানাবো কিভাবে বাড়িতে অল্প মূলধন নিয়ে বাতাসার ব্যবসা শুরু করেও মাসে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করবেন।
বাতাসা তৈরির ব্যবসা কিভাবে শুরু করা যায়?
(How to start a batasa making business?)
যেখানে ব্যবসা শুরু করার আগে মার্কেট রিসার্চ করে নেওয়া জরুরী। আপনি যে এলাকায় বাতাসার ব্যবসা করতে চান, সেই এলাকায় বাতাসার চাহিদা কেমন, কোন কোন মার্কেটে বাতাসা বিক্রি করতে পারবেন, বর্তমানে কত দামে বাতসা বিক্রি হচ্ছে এবং আপনি কত দামে বিক্রি করতে পারবেন এগুলো সম্পর্কে আপনাকে জেনে নিতে হবে।
এই ব্যবসা খুব অল্প মূলধন দিয়েও শুরু করা যায় এবং অল্প অল্প প্রোডাকশনের মাধ্যমে মার্কেটে বিক্রি করতে পারবেন বাতাসা। আপনি ছোট করে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন, যদি চাহিদা বৃদ্ধি পায় তবে আপনি এই ব্যবসা আরও অনেক বড় হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
বাতাসা তৈরির ব্যবসা করতে কি কি কাঁচামাল লাগে?
(What raw materials are needed to make Batasa?)
যে কোন কিছু তৈরি করে যদি আপনি সেটি নিয়ে ব্যবসা করতে চান, তবে আপনাকে প্রথমেই কাঁচামাল সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। কোথা থেকে কাঁচামাল পাবেন, কাঁচামালের দাম কেমন, কোথায় কম দামে কিনতে পারবেন ইত্যাদি ব্যাপারগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। বাতাসা তৈরি করতে গেলে আপনার যে সমস্ত কাঁচামাল দরকার হবে সেগুলি হল:
চিনি,ব্রেকিং সোডা, গুড়,ফুড কালার,জল,চিনি গরম করার পাত্র।
বাতাসা তৈরীর কাঁচামাল কোথায় কিনতে পাওয়া যায়?
বাতাসা তৈরীর কাঁচামাল খুবই সহজলভ্য। আপনি যেকোনো পাইকারি দোকানে বা মুদিখানা দোকান থেকেও কাঁচামাল কিনতে পারবেন। যেহেতু আপনি মোটামুটি বড় করে বাতাসা তৈরীর ব্যবসা শুরু করতে চলেছেন সেহেতু পাইকারি দোকানের থেকে বড় কোন মার্কেট থেকে কেনা বুদ্ধিমানের কাজ। কলকাতার বড় বাজারে আপনি কাঁচামাল সহজে পেয়ে যাবেন। দামেও কম হবে। বড় কোন মার্কেট থেকে হোলসেল রেটে অনেক বস্তা চিনি কিনে এনে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। বাংলাদেশের বাসিন্দাদের জন্য চকবাজার এমন কাঁচামাল কেনার জন্য উপযুক্ত জায়গা।
বাতাসা মেশিন কোথায় কিনতে পাওয়া যায়?
আপনি যদি বাতাসা তৈরি করতে করতে লাভের মুখ দেখতে পান, তবে অল্প টাকা বিনিয়োগ করে আপনি একটি বাতসা তৈরীর মেশিন কিনে নিতে পারেন। মেশিন ব্যবহার করে বাতাসা তৈরি করলে প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা থেকে চার হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন আপনি।
বর্তমানে বাতসা তৈরির মেশিন গুলি অটোমেটিক হিসেবে কাজ করে। পশ্চিমবঙ্গেই আপনি বাতাসা তৈরীর মেশিন কিনতে পারবেন। বাতাসার চাহিদা পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে বেশি। গুগুল থেকে আপনারা একটু ম্যানুফ্যাকচারিং মেশিন তৈরির ফ্যাক্টরিগুলোতে যোগাযোগ করলেই কিনতে পারবেন। তবে মেশিন কেনার আগে অবশ্যই নিজে গিয়ে ভালোভাবে বুঝে কিনবেন।
বাতাসা তৈরির মেশিনের দাম কত?
(What is the cost of batasa making machine?)
বাতাসা তৈরীর মেশিন কিনতে আপনাকে খরচ করতে হতে পারে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানি অনুযায়ী বাতাসা তৈরির মেশিনের দাম আলাদা হয়। আপনি যদি অটোমেটিক পদ্ধতির মেশিন কিনতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হতে পারে। এই অটোমেটিক মেশিনগুলি ঘন্টায় ৬০ কিলো বাতাসা তৈরি করতে পারে। ছোট মেশিন গুলি ঘন্টায় ২৫ কিলো থেকে ৩০ কিলো পর্যন্ত বাতাসা তৈরি করতে পারে।
আপনি যদি একবারে এতগুলো টাকা খরচ করতে অসমর্থ হন, সে ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলি ফিনান্স এর মাধ্যমে আপনাকে মেশিন দেবে। যারা অনেক বড় করেই ব্যবসা করতে চান তাদের জন্য অটোমেটিক মেশিন কিনে নেওয়াই ভালো।
বাতাসা তৈরি করতে কত বড় জায়গা লাগে?
(How much space does it take to make batasa?)
বাতাসা তৈরি করতে আপনাকে কমপক্ষে ১০০ বর্গফুটের একটি ঘর নিতে হবে। অটোমেটিক মেশিন নিয়ে কাজ করলে ১২০ বর্গফুট আকারের ঘর লাগবে। আপনি যদি হাতেই বাতাসা বানাতে পারেন সে ক্ষেত্রে বেশি জায়গার দরকার হবে না। এছাড়া বাতাসা তৈরি করার জন্য খুব বেশি একটা জায়গার প্রয়োজন পড়ে না। তবে অনেক বড় ভাবে এই ব্যবসা শুরু করতে চাইলে আপনাকে বড় জায়গা নিতে হবে।
কিভাবে বাতাসা তৈরি করা হয়?
(How to make batasa?)
বাতাসার ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে বাতাসা তৈরীর পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে।
অটোমেটিক মেশিন কিনে কাজ করলে আপনাকে তেমন কোন কষ্ট করতে হবে না। তবে হাতে এবং ছোট মেশিনের সাহায্যে করলে আপনাকে সমগ্র প্রক্রিয়াটি শিখে রাখতে হবে।
- 1 কেজি চিনির 300 গ্রাম জল, 10 গ্রাম বেকিং সোডা, পরিমাণ মতো ফুড কালার ভালো করে মিশিয়ে গরম করতে হবে।
- গরম হয়ে গেলে মিশ্রিত তরলটি একটি পাত্রে ঢেলে নিতে হবে।
- মেশিনে করতে চাইলে এই মিশ্রণটি মেশিনের মধ্য ঢেলে মেশিন চালিয়ে দিলেই অটোমেটিক পদ্ধতিতে বাতাসা তৈরি হতে থাকবে।
- আপনি যদি হাতে তৈরি করতে চান তবে পাত্রের মধ্যে থেকে অল্প অল্প তরল কোন প্লাস্টিকের উপর বা চটের বস্তার ওপর ফোঁটা ফোটা করে ফেলতে হবে। তার সাথে জোরে হাওয়া করতে হবে। মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলেই আপনার বাতাসা তৈরি হয়ে যাবে।
- এরপর প্যাকেটজাত করে ফেলতে পারলেই বাজারে বিক্রির জন্য বাতাসা প্রস্তুত হয়ে যাবে।
বাতাসা ব্যবসা করতে কি কি লাইসেন্স এর প্রয়োজন?
যে কোন ব্যবসা করতে গেলেই লাইসেন্স রাখা ভালো। বাতাসা তৈরীর ব্যবসা করতে গেলেও আপনাকে একটি লাইসেন্স নিতে হবে। ছোট আকারে ব্যবসা করলে প্রথম দিকে আপনার লাইসেন্সের প্রয়োজন পড়বে না। তবে বড় করে ব্যবসা করতে গেলে আপনি লাইসেন্স ছাড়া করতে পারবেন না। অনলাইনের মাধ্যমে আপনি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। লাইসেন্সের ব্যাপারে বিশদে জানার জন্য এলাকার পঞ্চায়েত অফিস বা বিডিও অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করতে চাইলে আপনাকে খাদ্য দপ্তরের লাইসেন্স নিতে হবে। এই ব্যবসার জন্য আপনার যে যে লাইসেন্স দরকার হবে, সেগুলো হল:
ট্রেড লাইসেন্স, FSSAI লাইসেন্স, MSME লাইসেন্স, GST নাম্বার।
বাতাসা তৈরির ব্যবসায় মার্কেটিং কিভাবে করা হয়?
(How is marketing done in the Batasa making business?)
যে কোন ব্যবসায় মার্কেটিং বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালোভাবে মার্কেটিং করতে পারলে আপনি প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ কিলো বাতাসা খুব সহজেই বিক্রি করতে পারবেন। যেহেতু আগেই বহু ব্যবসায়ী বাতাসা বিক্রি করছে তাই আপনার ব্যবসা ভালোভাবে দাঁড় করাতে গেলে ভালো মার্কেটিংয়ের প্রয়োজন।
এলাকার প্রতিটি মুদিখানা দোকান এবং দশকর্মা দোকানে বাতাসা বিক্রি করতে হবে।
এলাকার মন্দির সংলগ্ন দোকানগুলিতে অল্প দামে বাতাসে বিক্রি করার চেষ্টা করতে হবে।।
শহরের হোলসেল দোকানগুলিতে এবং পাইকারি বিক্রেতা তাদের কাছে বাতাসা বিক্রি করতে হবে।
ছোট-বড় পোস্টার টাঙিয়ে আপনার এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সেটি লাগিয়ে আপনার ব্যবসার প্রচার চালাতে পারেন।
বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং পেজ প্রমোশনের মাধ্যমে আপনার পণ্যের প্রচার চালাতে পারেন।
ই-কমার্স সাইটগুলিতে আপনার পণ্য সরাসরি বিক্রি করতে পারবেন।
এছাড়া আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনার ব্যবসার প্রচার চালাতে পারেন।
বাতাসা তৈরির ব্যবসা করতে কত টাকা লাগে?
(How much money does it take to start a batasa making business?)
বাতাসা তৈরীর ব্যবসায় খুব অল্প বিনিয়োগ এর মাধ্যমেও শুরু করতে পারেন। ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলেই মোটামুটি ভাবে আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। একদম হাতে করে এই ব্যবসা শুরু করতে চাইলে ৫০০০ টাকাই যথেষ্ট ব্যবসা শুরু করার জন্য। আপনি যদি একটি কারিগর রাখতে পারেন সে ক্ষেত্রে আপনার মুনাফা আরও বৃদ্ধি পাবে।
আপনার মূলধন যদি বেশি থাকে,তবে আপনি বাতাসা তৈরীর অটোমেটিক মেশিন কিনে খুব কম সময়ে প্রচুর পরিমাণে বাতাসা তৈরি করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে ১ লক্ষ টাকা থেকে ২ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে হতে পারে।
বাতাসা তৈরির ব্যবসায় লাভ কত?
(How much is the profit in the batasa making business?
প্রতি কিলো বাতাসা বিক্রি করে আপনি কমপক্ষে ১০ টাকা লাভ করতে পারবেন। বাতাস তৈরির মেশিন দিয়ে প্রত্যেক ঘন্টায় ৬০ কিলো বাতাসা তৈরি করা যায়। অর্থাৎ প্রত্যেক ঘন্টায় আপনি ৬০০ টাকা লাভ করতে পারবেন। সারাদিনে প্রায় ৬০০ কিলো বাতাসা তৈরি করা যায়, সে ক্ষেত্রে সারাদিনে আপনার লাভ হতে পারে ছয় হাজার টাকা।
আপনি যদি একটি মেশিন কিনে বাতাসা তৈরি শুরু করেন , তবে প্রত্যেক মাসে আপনি ২ লক্ষ টাকা থেকে তিন লক্ষ টাকা খুব সহজেই উপার্জন করতে পারবেন। বর্তমানে খুব ছোট ব্যবসায়ীরাও প্রত্যেক মাসে 40 হাজার টাকা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা উপার্জন করেন বাতাসা বিক্রির মাধ্যমে। এই ব্যবসায়ী লোকসান বলতে কিছুই নেই। আপনি যত বেশি বিনিয়োগ করতে পারবেন আপনার ততো বেশি লাভ হবে।