পশ্চিমবঙ্গের চাকরিপ্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন শূন্যপদে নিয়োগের জন্য আন্দোলন করে আসছেন। অনেকে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষক পদে যোগদান করতে না পারার জন্য আন্দোলন করছেন। দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক মামলা উঠেছে হাইকোর্টে(High Court) । বহু চাকরি প্রার্থীরা সেই মামলাতে যোগদান করেছেন। সব থেকে বেশি প্রভাবিত হয়েছেন শিক্ষক প্রার্থীরা। তারা দীর্ঘদিন আগে সমস্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পরেও এখনো কাজে যোগদান করতে পারেননি।
এরই মধ্যে দেখা গেল ঠিক উল্টো ঘটনা। নিয়োগপত্র হাতে পেয়েও প্রাথমিক শিক্ষক পদে(Primary Teacher Post) যোগ দিলেন না ৬২২ জন প্রাথমিক শিক্ষক পদপ্রার্থী। এই ঘটনায় অবাক হয়ে গিয়েছেন রাজ্যের একাধিক সরকারি কর্তারা। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে এই শূন্যপদগুলি কিভাবে পূরণ করা হবে প্রার্থী দিয়ে?
২০০৯ সালের বিজ্ঞপ্তির প্যানেলভুক্ত ১৫০৬ জন প্রাথমিক শিক্ষককে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যায় তাদের মধ্যে ৬২২ জন এখনো পর্যন্ত শিক্ষক পদে যোগদান করেননি। বলা ভালো তারা সরকারি চাকরি করার সুযোগ পেয়েও সেই অফার ছেড়ে দিয়েছেন। ২০০৯ সালের প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষা(Primary Teacher Recruitment) অনিয়মের কারণে বাতিল হয়ে যায়। সেই সমস্ত চাকরিপ্রার্থীদের পুনরায় ২০১৪ সালে পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালের মে মাসে তাদের ভাইভা পরীক্ষা নেওয়া হয়। তখন রাজ্যে শিক্ষা দপ্তরে একটি প্যানেল দেওয়া হয়েছিল এবং বহু চাকরি প্রার্থীরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন যে তারা এবার এই চাকরিটি পেয়ে যাবেন।
তবে সে সময় নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিক মামলা চলায় প্যানেলটি প্রকাশ করা হয়নি, গত বছর নভেম্বর মাসের দিকে এই প্যানেলটি প্রকাশ করা হয়েছিল। তারপর থেকেই চাকরিপ্রার্থীদের বাড়িতে পাঠানো হয় নিয়োগপত্র। দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের পক্ষ থেকে সে সময় ১৫০৬ জনকে নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যায় যে তাদের মধ্যে ৬২২ জন প্রার্থী এখনো পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেননি।
সংসদের পক্ষ থেকে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয় কতজনকে নিয়োগপত্র পাঠানো হয়েছে এবং কতজন যোগদান করেছে সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে হবে। তবে সমস্ত বিস্তারিত রিপোর্টটি হাতে পাওয়ার পরেই সামনে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্যটি। যেখানে দেখা গিয়েছে ১৫০৬ জনের মধ্যে ৬২২ জন প্রার্থী এখনো পর্যন্ত শিক্ষক পদে যোগদান করেননি।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে এত সংখ্যক প্রার্থী সরকারি চাকরি করার সুযোগ পেয়েও কেন তারা কাজে যোগ দিলেন না। সরকারি কর্তাদের একাংশ মনে করছেন এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অনেকেই হয়তো তারা বিভিন্ন রকম পেশার সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছেন। অনেকে বা অন্য কোন সরকারি চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। তাই তারা এই চাকরিতে আর যোগদান করতে চান না। তবে এই বিপুল সংখ্যক শূন্য পদ কিভাবে পূরণ করা হবে, তা নিয়ে এখনো পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি শিক্ষা সংসদ। পরবর্তীকালে হয়তো আদালতের হস্তক্ষেপে এই বিষয়টির মীমাংসা হতে পারে।