স্কুল জগতে পা দেবার পর থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন রকম কারণে হাত খরচের প্রয়োজন পড়ে। অনেকেই এই হাত খরচের জন্য পরিবারের উপর নির্ভরশীল থাকেন, অনেকে আবার নিজেদের চেষ্টা অনুযায়ী কিছু টাকা উপার্জন করেন এবং সেই টাকা দিয়ে নিজেদের শখ আহ্লাদ পূরণ করেন। ক্রমশ উঁচু ক্লাসে উঠতে উঠতে খরচের পরিমাণ আরো বাড়তে থাকে। অনেকে নিজেদের পড়াশোনার খরচ নিজেরাই চালান এবং পরিবারের উপর কোনোভাবেই নির্ভরশীল থাকেন না।
আজকে এমনই চারটি ইনকাম করার সহজ পদ্ধতি (Earning Ideas) সম্পর্কে জানানো হবে, যেগুলি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য খুবই উপযোগী। ছাত্রছাত্রীরা এই উপায়গুলি মেনে চললে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা উপার্জন করতে পারবেন। (4 Easy Ways to Earn Money for Students)
১) কন্টেন্ট রাইটিং:
পড়াশোনার পাশাপাশি কনটেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে আপনারা উপার্জন করতে পারবেন।
কি করতে হয়?
এই কাজে মূলত বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে লেখালিখির কাজ করতে হয়। সাম্প্রতিক কোন ইস্যু, ঘটনা, চাকরির বিজ্ঞপ্তি, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপনারা লিখতে পারেন।
কি কি স্কিল প্রয়োজন?
আপনি যদি ভালোভাবে লিখতে পারেন, তাহলে কন্টেন রাইটিং আপনার জন্য অন্যতম একটি সুযোগ হতে পারে। এছাড়া আপনি যে ভাষায় লিখতে চান সেই ভাষা সম্পর্কে প্রথমে সম্পূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে হবে। যারা বাঙালি তারা বাংলা ভাষায় কন্টেন্ট রাইটিং করতে পারেন। ইংরেজিতে দক্ষ থাকলে ইংরেজি ভাষাতেও কনটেন্ট রাইটিং করতে পারেন।
কত টাকা পর্যন্ত ইনকাম সম্ভব?
প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন আপনি কনটেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে। বিভিন্ন সোশ্যাল ওয়েবসাইট আছে, যেখানে আপনারা সরাসরি এই কাজের সুযোগ পেয়ে যাবেন এবং সেখানে প্রতিটি লেখা পিছু উপার্জন করতে পারবেন।
কতক্ষণ সময় প্রয়োজন?
কনটেন্ট রাইটিং করতে খুব একটা বেশি সময় লাগে না। যে বিষয়টি সম্পর্কে আপনি লিখতে চান, সেই বিষয়টি সম্পর্কে যদি আপনার সম্পূর্ণ জ্ঞান থেকে থাকে তবে আপনি আপনার নিজের মতো করে লিখতে পারেন।এছাড়া কোন বিষয় নিয়ে লেখার আগে আপনি সেই বিষয়টি নিয়ে যদি রিসার্চ করে নিতে পারেন , তাহলে আপনার লেখা আরো ভালো মানের হবে এবং সময়ও লাগবে কম। মোটামুটি দশ থেকে কুড়ি মিনিটের মধ্যে একটি লেখা সম্পূর্ণ করে ফেলা সম্ভব।
২) টিউশনি:
পড়াশোনার (Study)পাশাপাশি আরেকটি উপার্জনের পথ হল টিউশন বা কোচিং করানো। বর্তমানে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরা স্কুল কলেজের পাশাপাশি কোচিং সেন্টার বা টিউশন টিচার এর উপর নির্ভরশীল। স্কুল কলেজ এর পাশে কোন জায়গায় ভাড়া নিয়ে বা স্টেশনের পার্শ্ববর্তী কোন ঘর ভাড়া নিয়ে আপনারা টিউশন বা কোচিং শুরু করতে পারেন।
আপনি যে বিষয়টি পড়াতে বেশি পারদর্শী, সেই বিষয়টি পড়ানো শুরু করুন। আপনার পড়ানোর পদ্ধতি যদি ভাল হয় এবং ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকেরা যদি আপনার পড়ানো পছন্দ করেন তাহলে তাদের দেখাদেখি আরো বহু সংখ্যক ছাত্রছাত্রীরা আপনাদের কাছে পড়তে আসবে।
ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও আপনাকে বিবেচনা করতে হবে। একটি কোচিং সেন্টার বা টিউশন সেন্টারের নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত সকল ধরনের ছাত্র-ছাত্রী আসেন। তাদের কাছ থেকে একই হারে বেতন নিতে হবে। এই জন্য বেতন এমন নেওয়া উচিত যাতে কারো জন্য সমস্যা না হয় এবং প্রত্যেকেই পড়াশোনা(Study)করতে পারে।
টিউশন করার মাধ্যমে আপনারা প্রতি মাসে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা যদি বাড়তে থাকে তাহলে আপনার উপার্জনের(Earning) পরিমাণও ক্রমশ বাড়তে থাকবে।
৩) Part Time Job :
বিভিন্ন রকম পার্টটাইম জব আপনারা করতে পারেন, যেমন:
(i) ক্যাটারিং:
বহু ছাত্রছাত্রীরা বর্তমানে পার্টটাইম কাজ হিসেবে ক্যাটারিং এর কাজ করে থাকেন। এলাকার বিভিন্ন ক্যাটারার সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে আপনারা এই কাজে নিজেদের যুক্ত করতে পারবেন।
ক্যাটারিং এর কাজ মূলত সন্ধ্যে থেকে রাত অব্দি হয়। এজন্য আপনারা সারাদিন পড়াশোনা(Study)করে স্কুল-কলেজ করেও রাতে ফাঁকা টাইমে এই কাজটি করতে পারবেন। বিয়ের মরসুমে মাসের বেশ কয়েকটি দিন ক্যাটারিং এর কাজ হবে আপনার। এছাড়া আপনি যদি এলাকার কোন অনুষ্ঠান লজে কথা বলে রাখতে পারেন , তাহলে তাদের কোন অনুষ্ঠানেও আপনি ক্যাটারিং করার জন্য যেতে পারেন।
ক্যাটারিং এর কাজ করেও আপনারা প্রত্যেক মাসে কয়েক হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন এবং এর জন্য আপনাদের খুব একটা বেশি সময় নষ্ট করা লাগবে না। মাসের বেশ কয়েকটা দিন সন্ধ্যা থেকে রাত অব্দি কাজ করলেই আপনারা কয়েক হাজার টাকা উপার্জন করে ফেলতে পারবেন।
(ii) ফুড ডেলিভারি:
বর্তমানে মানুষের বাড়িতে খাবার তৈরি করার সময় এর বড়ই অভাব। এজন্য তারা বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করে থাকে অনলাইন অ্যাপ এর মাধ্যমে। Zomato, Swiggy থেকে শুরু করে বহু অ্যাপ খাবার ডেলিভার করে। এই সংস্থাগুলির ফুড ডেলিভারি(Delivery) পার্সন হিসাবে কাজ করে সাধারণত স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এবং যুবক যুবতীরা।
আপনার যদি এই কোম্পানিগুলিতে কাজের জন্য আবেদন করেন তাহলে খুব সহজেই আপনারা কাজ পেয়ে যাবেন কারন এই সংস্থাগুলিতে প্রচুর ডেলিভারি(Delivery) বয় এবং ডেলিভারি গার্ল এর দরকার হয়।
প্রত্যেক মাসে আপনারা ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন বা কিছু ক্ষেত্রে উপার্জনের পরিমাণ হবে তারও বেশি। সারাদিন পড়াশোনা(Study)করে স্কুল বা কলেজ থেকে ফেরার পর সন্ধ্যা থেকে রাত অব্দি আপনারা ডেলিভারির কাজ করতে পারেন। এছাড়া ছুটির দিন সারাদিন ধরেই আপনারা কাজ করতে পারবেন খাবার ডেলিভারি(Delivery) দেবার।
(iii) ডাটা এন্ট্রি অপারেটর:
বিভিন্ন কোম্পানি, অফিস এবং এলাকার কোন বড় রেস্টুরেন্ট বা হোটেলের হিসাব নিকাশ, কারা আসছেন বা যাচ্ছেন তাদের হিসাব রাখা এমন বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ করা হয়। বেশিরভাগ কাজগুলি অফলাইনে করা হয় এবং সেগুলি পরবর্তীকালে কম্পিউটারে লিপিবদ্ধ করা হয়।
ছাত্র-ছাত্রীরা খুব অল্প সময় কাজ করে এই কাজটি করতে পারবেন। বেসিক কম্পিউটার স্কিল জানা থাকলে এই কাজটি অনায়াসেই করে ফেলতে পারবেন।
৪) ফটোগ্রাফি:
পড়াশোনার পাশাপাশি উপার্জনের আরেকটি পথ হলো ফটোগ্রাফি। ফটোগ্রাফির জন্য আপনাকে প্রথমে বেশ কিছু মূলধন নিযুক্ত করতে হবে। ভালো মানের ক্যামেরা থাকা জরুরী। ফটোগ্রাফি (Photography Business) করার মাধ্যমে আপনারা বিভিন্ন উপায়ে টাকা উপার্জন করতে পারেন।
ব্রাইডাল ফটোশুট এ কাজ করে আপনারা উপার্জন(Earning) করতে পারবেন। বিভিন্ন রকম ওয়েবসাইটে আপনার নিজের ক্যামেরায় বা নিজের মোবাইলে তোলা ছবি বিক্রি করে উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে। এমন বিশ্বাসযোগ্য বেশ কিছু ওয়েবসাইট আপনারা ইন্টারনেটে সার্চ করলে পেয়ে যাবেন। এখানে আপনারা আপনাদের নিজে থেকে তোলা ছবি বিক্রি করে প্রচুর টাকা উপার্জন করার সুযোগ পাবেন।
এছাড়া এলাকার কোন বিয়ের অনুষ্ঠান বা শুভ অনুষ্ঠানের ফটোগ্রাফি (Photography Business)র কাজও করতে পারেন। ফটোগ্রাফি (Photography Business) ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানে ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমেও আপনারা তাদের মুহূর্তটিকে সুন্দর করে তুলতে পারবেন।