উচ্চ মাধ্যমিকের পর থেকে যখন উচ্চশিক্ষা শুরু হয়, তখন পড়াশোনার পাশাপাশি উপার্জনের একটি রাস্তা (Earning Ideas) অপশনাল হিসেবে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। শুধুমাত্র বইয়ের জ্ঞান নিয়ে জীবনে সফল হওয়া যায় না। তার জন্য অবশ্যই উপার্জন প্রয়োজন রয়েছে। অনেক ছাত্রছাত্রীরা আছেন, যারা স্কুল জীবন পার করার পর পড়াশোনা এবং অন্যান্য খরচের জন্য পরিবারের উপর নির্ভরশীল থাকতে চান না। তারা উপার্জনের কোন একটি রাস্তা খুঁজতে চান, যেটার মাধ্যমে পড়াশোনা সহ অন্যান্য খরচ নিজেরাই জোগাড় করতে পারেন।
মূলত কলেজ(College) লাইফের থেকেই ছেলেমেয়েদের খরচের পরিমাণ বেশ অনেকটাই বেড়ে যায়। কলেজের বেতন, পড়াশোনার খরচ সহ আরো অনেক কাজে অর্থের দরকার পড়ে। এইজন্য এই সময়টাতে কোন একটি কাজের মাধ্যমে টাকা উপার্জন(Earning) করা অনেকের অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে।
আজকের এই প্রতিবেদনে আপনাদের জানানো হবে কলেজ পড়ুয়ারের জন্য ১৫ টি পার্ট টাইম বিজনেস(15 Part Time Business Ideas For College Students) আইডিয়া, যেগুলি পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ও করা সম্ভব। এই কাজগুলি করতে করতে আপনারা বাস্তব চিনতে শিখবেন। তাছাড়া অনেক এক্সপেরিয়েন্সও অর্জন করতে পারবেন, যা পরবর্তীকালে আপনার জীবনে কাজে লাগবেই।
১. টিউশনি:
কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপার্জন করার সব থেকে ভাল একটি রাস্তা হলো টিউশন পড়ানো। আপনি যদি পড়াশোনায় ভালো হন, তাহলে অফলাইন টিউশনি(Tution) পড়িয়েও প্রতিমাস অনেক টাকা উপার্জন(Earning) করতে পারবেন। আপনি যে বিষয়টি পড়াতে চান সেই বিষয়টি সম্পর্কে আপনার গভীর জ্ঞান থাকতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধামতো সময়ে এবং নির্দিষ্ট একটি বেতনের বিনিময়ে আপনি অফলাইন কোচিং শুরু করতে পারেন।
এখানে আপনার প্রাথমিক মূলধন বলতে কোন কিছুরই প্রয়োজন পড়বে না। তবে প্রতি মাসের শেষে আপনি বেতনের পাশাপাশি আলাদা করে সম্মান অর্জন করতে পারবেন।
২. কন্টেন্ট ক্রিয়েটর/কন্টেন্ট রাইটার:
একজন কন্টেন্ট রাইটার(Content Writer) বা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করে আপনি প্রতিমাসে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এই কাজে আপনার খুব বেশি একটা সময় খরচ হবে না। দিনের অবসর সময় আপনি লেখালেখি করার মাধ্যমে প্রত্যেক মাসে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন। বিভিন্ন রকম সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media) প্লাটফর্মে বা কোন ব্লগ বা ওয়েবসাইটে লেখালেখির মাধ্যমে অনেক টাকা উপার্জন(Earning) করা যায়।
পাশাপাশি কোন একটি বিষয় নিয়ে রিসার্চ করে লেখার পর সেই লেখাটি আপনি অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রিও করতে পারবেন। এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে ইন্টারনেটে(Internet)। তবে অবশ্যই আপনাকে সেই ওয়েবসাইটগুলি ভেরিফাই করে তারপরেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কনটেন্ট হিসেবে আপনাকে অন্যের হয়ে ভিডিও বা অডিও তৈরি করতে হতে পারে, তবে এই কাজটি একটু সময় সাপেক্ষ এবং ধৈর্য প্রয়োজন। তবে প্রতি ভিডিও বা প্রতি কাজ পিছু আপনারা মোটা অংকের উপার্জন করতে পারবেন।
৩. রিসেলিং:
এখনকার দিনে অন্যতম একটি স্মার্ট বিজনেস হলো রিসেলিং বিজনেস(Reselling Business)। Mesho বা Shopsy এর মত প্ল্যাটফর্ম গুলি থেকে আপনারা এই কাজটি খুব সহজেই করতে পারবেন।
প্রথমে আপনাকে নির্দিষ্ট একটি পণ্যের ছবি এবং তার শর্ট ডিটেলস আপনার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টগুলিতে পোস্ট করতে হবে। কেউ যদি আপনার কাছ থেকে এই জিনিসটি কিনতে চায়, তাহলে আপনি এই ওয়েবসাইট গুলির মাধ্যমে তার ঠিকানায় অর্ডার করে দিতে পারেন নিজের একটি লাভ রেখে।
যেমন ধরুন, একটি জিনিসের দাম ৫০০০ টাকা। সেটি আপনি রিসেলিংয়ের মাধ্যমে কাউকে ৫৫০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। কোম্পানি জিনিসটি সেই ব্যক্তির ঠিকানাতে ডেলিভার করবে এবং সেই ব্যক্তির থেকে ৫৫০০ টাকাই নেবে। সেখান থেকে আপনার লাভের ৫০০ টাকা আপনার একাউন্টে চলে আসবে।
৪. ইন্টার্নশিপ:
বিভিন্ন কোম্পানি গুলি তাদের কাজ করার জন্য ইন্টার্ন(Intern) খুজে থাকে। অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে আপনারা খুব সহজেই internship এর জন্য এপ্লাই করতে পারবেন। বিভিন্ন কোম্পানির এমপ্লয়ি হিসেবে আপনারা internship এর অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন।
এখান থেকে প্রতি মাসে উপার্জনের পাশাপাশি আপনারা যে দক্ষতা অর্জন করবেন বা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবেন, তা পরবর্তীকালে আপনাদের অনেক কাজে লাগবে।
৫. টেলিকলিং:
আগে প্রতিটি কোম্পানিতে টেলিকলিং(Telecalling) কাজের জন্য ৫০ থেকে ১০০ জন বরাদ্দ থাকত। কোম্পানি এই সমস্ত কর্মচারীদের নিজের হাতে রেখে দিত। তবে করোনাভাইরাস আসার পর থেকে টেলিকলিং কাজটি মূলত অনলাইন হয়ে গিয়েছে।
Indeed, Naukri এর মত ওয়েবসাইট থেকে আপনারা খুব সহজেই টেলিকলিং এর কাজ খুঁজে নিতে পারবেন। পড়াশোনার পাশাপাশি আপনারা অবসর সময়ে পার্ট টাইম হিসেবে এই কাজটি করতে পারবেন।
৬. সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট
সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের(Social Media Influencer) বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পেজ, বা বড় কোন কোম্পানির বা কোন বড় দোকানের সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট ম্যানেজ করার মাধ্যমে প্রত্যেক মাসে অনেক টাকা উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে।
এখানে কাজ বলতে মূলত বিভিন্ন কমেন্ট গুলির উত্তর দেওয়া, ইনবক্সে মানুষের প্রশ্ন উত্তর সমাধান করা, কোন প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করা ইত্যাদি।
ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে আপনারা এই কাজটি সহজেই খুঁজে নিতে পারবেন। তার জন্য অবশ্যই আপনাকে এমন গ্রুপের সন্ধান করতে হবে।
৭ সাবটাইটেল রাইটার:
ইউটিউবে ভিডিওর নিচে সাবটাইটেল দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওতে সাবটাইটেল লেখা থাকলে তাও অতিরিক্ত অনেক মানুষের কাছে গিয়ে পৌঁছায়। বলা হয়েছে যে ভিডিওতে সাবটাইটেল থাকলে তা আরো বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাবে। এমনকি ইন্টারন্যাশনাল কন্টেন্টও হতে পারে। ভিডিওর বাংলা বা হিন্দি ভাষা সারা বিশ্বের লোক বুঝবে না, তার জন্য অবশ্যই ইংরেজিতে সাবটাইটেল লেখা অবশ্যক।
সাবটাইটেল(Subtitle) লেখার জন্য আপনারা প্রত্যেক কাজ পিছু মোটা অংকের চার্জ নিতে পারবেন। বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল মারফত যোগাযোগ করে আপনারা এই কাজটি করতে পারবেন। তাছাড়া অন্যান্য Job ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশনে এই কাজটি আপনারা পেয়ে যাবেন।
৮. Thumbnail মেকার:
ইউটিউব ভিডিওর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো Thumbnail, Thumbnail ভিডিওতে দর্শকদের আকৃষ্ট করে থাকে। এইজন্য প্রত্যেক ভিডিওতে Thumbnail অত্যন্ত আকর্ষক হওয়া প্রয়োজন।
Thumbnail বানানোর কাজ করে আপনারা প্রত্যেক মাসে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এখানে একসাথে আপনারা অনেক youtube চ্যানেলের কাজ করতে পারবেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়েও এই কাজটি করা যায়। আবার আপনার যদি এডিটিং এর হাত ভালো থাকে তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এক একটি কাজ শেষ করে ফেলতে পারবেন।
৯. ট্রান্সক্রাইব অডিও:
বিভিন্ন কোম্পানির কল রেকর্ড থেকে সেই কলিং কনভারসেশন আকারে লেখার কাজকেই বলা হয় ট্রান্সক্রাইব অডিও(Transcribe Audio)। এখানে কোম্পানির তরফে আপনাকে দুটি ব্যক্তির কথোপকথনের অডিও দিয়ে দেওয়া হবে, তারপর আপনাকে সেই অডিও শুনে একটি কনভারসেশন তৈরি করতে হবে।
ইন্টারনেটে সার্চ করলে আপনারা এমন কাজ পেয়ে যাবেন। আপনি যে ভাষা সম্পর্কে ট্রান্সক্রাইব অডিও তৈরি করতে দক্ষ, সেই ভাষাটি সিলেক্ট করে নিয়ে সেই অনুযায়ী আপনাকে কাজ করতে হবে।
১০. ইন্সুরেন্স সেলিং:
বিভিন্ন ব্যাংকের ইন্সুরেন্স সেল(Insurence Selling Business) করার মাধ্যমে অতিরিক্ত উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য আগে একটি পরীক্ষা দিতে হয়। তারপরেই আপনি একটি ইন্সুরেন্স সেলিং পারসন হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
বিভিন্ন ব্যাংকের ইন্সুরেন্স শাখায় যোগাযোগ করে এই কাজটি সহজেই পেয়ে যেতে পারেন আপনারা। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব হিসেবে এই কাজটি আপনারা করতে পারবেন।
১১. ল্যাঙ্গুয়েজ টিউটর:
ভাষা শেখানোর মাধ্যমে উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে ইন্টারনেটে। এর জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ভাষা সম্পর্কে দক্ষ হতে হবে। তারপর সেই ভাষাটি শেখানোর মাধ্যমে প্রত্যেক মাসে উপার্জন করতে পারবেন।
ইন্টারনেটে এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে ল্যাঙ্গুয়েজ টিউটর(Language Tutor Job) হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য আপনাকে অবশ্যই অথেনটিক কোন একটি ওয়েবসাইট সম্পর্কে জেনে নিতে হবে, তারপর সেখানে কাজের জন্য এপ্লাই করতে হবে।
১২. ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং:
বড় বড় ব্র্যান্ডগুলি তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য ইনফ্লুয়েন্সারদের নিয়োগ করে থাকে। তবে আপনি ইনফ্লুয়েন্সার না হওয়ার সত্বেও এই কাজটি করতে পারবেন।
প্রথমে বড় কোন ব্র্যান্ডের থেকে একটি নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট এর ভিত্তিতে কাজ নিতে হবে। তারপর বড় কোন ইনফ্লুয়েন্সার এর সাথে কন্টাক্ট করে সেই কাজটি তাকে দিয়ে করিয়ে নিতে হবে।
যেমন ধরুন পুমা বা এমন বড় কোন কোম্পানির কোন পণ্যের প্রচারের জন্য আপনি সেই কোম্পানির সাথে ১০ হাজার টাকার একটি ডিল করলেন। তারপর বড় কোন ইনফ্লুয়েন্সার এর সাথে দরাদরি করে আপনি সেই কাজটি ৫০০০ টাকায় তাকে দিয়ে করিয়ে নিলেন। এখানে কোম্পানির কাজও হয়ে গেল, উপরন্তু আপনি ৫ হাজার টাকা লাভ করে ফেলতে পারবেন।
১৩. ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি:
ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফি করার শখ থাকলে আপনার এই শখকে কাজে লাগিয়েও প্রত্যেক মাসে মোটা অংকের টাকা উপার্জন করতে পারবেন। বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে ভিডিওগ্রাফি বা ফটোগ্রাফির মাধ্যমে উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে।
তাছাড়া ভিডিওগ্রাফি বা ফটোগ্রাফি সেল করার মাধ্যমে উপার্জন করা যায়। ইন্টারনেটে এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে ভিডিও এবং ছবি বিক্রি করার মাধ্যমে উপার্জন করার সুযোগ পাওয়া যায়।
১৪. সার্ভে ওয়েবসাইট:
বেশ কিছু কোম্পানি আছে যারা আপনাকে দিয়ে সার্ভে করিয়ে মোটা অংকের টাকা দিতে পারে।
এই ওয়েবসাইটগুলি প্রথমে আপনাকে আপনার নাম, ঠিকানা জিজ্ঞেস করবে। তারপর আপনার বাড়িতে টিভি বা ফ্রিজ আছে কিনা তা জিজ্ঞেস করবে। তারপর সেই অনুযায়ী আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবে। সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়ে গেলে কোম্পানির পক্ষ থেকে আপনাকে ৫০-১০০ টাকা দেওয়া হবে।
দিনে বেশ কয়েকটি সার্ভে কমপ্লিট করার মাধ্যমে আপনার প্রত্যেকদিন ৫০০ টাকা বা তারও বেশি উপার্জন করে ফেলতে পারবেন।
১৫. ডেলিভারি জব:
বর্তমানে মানুষের বাড়িতে খাবার তৈরি করার সময় এর অভাব। তাই অনেকেই অনলাইনে ফুড ডেলিভারি অ্যাপ এর ওপর নির্ভরশীল। Zomato, Swiggy থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু অ্যাপ খাবার ডেলিভার করে। এই সংস্থাগুলির ফুড ডেলিভারি(Delivery) পার্সন হিসাবে কাজ করে আপনারা প্রতিমাসে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এই সংস্থাগুলিতে প্রচুর ডেলিভারি(Delivery) বয় এবং ডেলিভারি গার্ল এর দরকার হয়।
প্রত্যেক মাসে আপনারা ২০ হাজার টাকা বা তার বেশি উপার্জন করতে পারবেন। এখানে আপনি কলেজে পড়তে পড়তেও পার্টটাইম হিসাবে কাজ করতে পারেন। তাছাড়া সারাদিন পড়াশোনা করার পর রাতে নাইট শিফটেও কাজ করতে পারেন।